On This Page

পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ

ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ২য় পত্র - পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ

ব্যবস্থাপনার প্রথম ও প্রধান কাজ হলো পরিকল্পনা। এটি হলো ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কাজের ভিত্তি । ভবিষ্যতে আমরা কী চাই, কখন ও কিভাবে চাই ইত্যাদি বিষয়গুলো পূর্বে নির্ধারণ করাকেই পরিকল্পনা বলে । তাই পরিকল্পনা একটা চিন্তনীয় কাজ। চিন্তায় ভুল হলে পরিকল্পনায় তার যেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ঠিক একইভাবে পরিকল্পনায় ভুল হলে বাস্তবায়নমূলক কাজেও ভুল হয় । ফলে কাঙ্ক্ষিত ফললাভ সম্ভব হয় না । আমরা ব্যক্তিগত কাজ করার ক্ষেত্রে যদি সারাদিনের একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী কাজ করি, তবে দেখা যাবে কাজগুলো অনেক সুন্দর হয়েছে । তাই প্রতিটা কাজের পূর্বেই ভেবে-চিন্তে পরিকল্পনা গ্রহণ আবশ্যক। পরিকল্পনার সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত । পরিকল্পনা নিতে গেলে বিকল্প নির্ধারণ, মূল্যায়ন ও উত্তম বিকল্প গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে । এই উত্তম বিকল্প গ্রহণের কাজকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ বলে । বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে প্রতিষ্ঠানে ও ব্যক্তি জীবনে প্রায়শই সিদ্ধান্ত নিতে হয় । তাই পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্পর্কিত জ্ঞান যে কোনো ব্যক্তিকেই চলার পথে কার্যকরী সহায়তা প্রদান করতে পারে ।

চিত্র : পরিকল্পনা সংক্রান্ত একটা ধারণা মডেল

এ অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা (শিখন ফল)

১. পরিকল্পনার ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে ।

২. আদর্শ পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করতে পারবে ।

৩. পরিকল্পনার লক্ষ্যসমূহ ব্যাখ্যা করতে পারবে ।

৪. পরিকল্পনার প্রণয়নের ধাপসমূহ বিশ্লেষণ করতে পারবে ।

৫. পরিকল্পনার প্রকারভেদ ব্যাখ্যা করতে পারবে ।

৬. পরিকল্পনার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে পারবে ।

৭. উত্তম পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করতে পারবে ।

৮. একার্থক ও স্থায়ী পরিকল্পনার পার্থক্য চিহ্নিত করতে পারবে ।

৯. উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনার মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে পারবে ।

১০. সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে ।

১১. সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ করতে পারবে ।

১২. সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে পারবে । 

১৩. সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তাকারী উপাদানগুলো শনাক্ত করতে পারবে ।

১৪. সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করতে পারবে ।

১৫. সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারবে ।

১৬. সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমস্যা চিহ্নিত করতে পারবে এবং সমাধানকল্পে সুপারিশ করতে পারবে ।

Content added By

কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখার শিক্ষার্থীদের বনভোজন হবে । স্থান ঠিক হলো কুমিল্লার ময়নামতি । তারিখ ও চাঁদার হার ঠিক করে অফিসে ছাত্রছাত্রীদের টাকা জমা দিতে বলা হলো । পরবর্তী করণীয় কিছুই ঠিক না করে অধ্যক্ষ স্যার ক'দিন কলেজের বাইরে থাকলেন । টাকা কিছু জমা হলো ঠিকই কিন্তু গাড়ি, বাবুর্চী, খাবার মেন্যু কিছুই ঠিক হলো না । শেষ দিকে এসে তড়িঘড়ি করে তা ঠিক হলো কিন্তু শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি হয়নি । শেষদিনেও অনেকে টাকা জমা দিয়ে গাড়িতে উঠে বসেছে। ফলে প্রথমে সীট নিয়ে ঝামেলা । অনেকে রাগ করে যাবেই না । কোনোভাবে ম্যানেজ হলো । পরে দেরি করে যেয়ে সুবিধামতো স্পট পাওয়া গেল না । যাও বা মিললো খাবার দিতে দেরি হলো । মূল বিপদটা হলো যখন অনেকে খাবারই পেল না । অধ্যক্ষ স্যার ও শিক্ষকগণ খুবই মানসিক কষ্ট নিয়ে কলেজে ফিরলেন । যথাযথ পরিকল্পনার অভাবই ভোগান্তির কারণ এটা সবাই স্বীকার করছেন ।

ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের পূর্বনির্ধারিত নক্শা বা চিত্রকে পরিকল্পনা বলে । এটি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার প্রথম ও প্রধান কাজ । এটি ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কাজের ভিত্তিস্বরূপ। তাই যে কোনো কাজ শুরুর আগেই ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করে কাজ ঠিক করতে হয় । তাই ভবিষ্যতে কী করা হবে এ সম্পর্কে আগাম চিন্তা-ভাবনা করে করণীয় ঠিক করাকেই পরিকল্পনা নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে । কী করা হবে এটি ঠিক করা যেমনি পরিকল্পনা তেমনি কখন, কোথায়, কার দ্বারা, কিভাবে, কত সময়ে কাজটি করা হবে তাও পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত বিষয়। উপরের উদাহরণটি বিবেচনায় নিলে দেখা যায় যে, পিকনিকের স্থান, চাঁদার হার এবং কোথায় টাকা জমা হবে তা ঠিক করা হয়েছিল । কিন্তু অবশিষ্ট কাজগুলো আগে ঠিক করা, দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া, যথাসময়ে যথা উদ্যোগ নেয়া ইত্যাদি বিষয় না হওয়ায় পিকনিক নিয়ে এরূপ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

Content added By

পরিকল্পনা হলো ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের পূর্বনির্ধারিত প্রতিচ্ছবি। ব্যবস্থাপনা কার্য প্রক্রিয়ায় পরিকল্পনা প্রথম ও প্রধান গুরুত্বপূর্ণ কাজ । এর এমন কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান যা ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কার্য হতে একে স্বতন্ত্র রূপ প্রদান করেছে । নিম্নে এর বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করা হলো :

১. পরিকল্পনার প্রাথমিকতা ও মুখ্যতা (Primacy of planning) : পরিকল্পনা হলো ব্যবস্থাপনার প্রথম ও মৌলিক কাজ । এটি অন্যান্য সকল কাজের ভিত্তিস্বরূপ। কী করা হবে শুধুমাত্র এতটুকু ঠিক করাই পরিকল্পনা নয় । বরং কখন, কিভাবে, কার দ্বারা, কত সময়ে, কোন কাজ করানো হবে ইত্যাদি বিষয়ও পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত । তাই সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা, নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সকল কাজেই পরিকল্পনার অনুসরণ করা হয় ।

২. চিন্তন-মনন প্রক্রিয়া (Mental-thinking process) : পরিকল্পনার বিষয়টি চিন্তার সাথে সম্পৃক্ত । যদিও পরিকল্পনা প্রণয়নে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয় তথাপিও এর মূল উদ্দেশ্যই থাকে চিন্তাকে অধিক কার্যকর করা। এজন্য বলা হয়, “পরিকল্পনা হলো কাজ শুরুর পূর্বে চিন্তা-ভাবনার প্রক্রিয়া” (Process of thinking before doing)। তাই পরিকল্পনা কোনো শারীরিক বা বাহ্যিক (Physical) কাজ নয় । এটি চিন্তন-মনন প্রক্রিয়া ।

৩. ভবিষ্যৎ কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে অনুমান (Assumptions regarding future course of action): পরিকল্পনা সব সময়ই ভবিষ্যৎ অনুমানের সাথে জড়িত । এ অনুমান শুধুমাত্র কী করা উচিত বা কি করলে লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় । বরং প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবেশ বা পরিকল্পনা অঙ্গন কেমন থাকবে এবং গৃহীত পরিকল্পনা সে সকল পরিবেশের মধ্য দিয়ে কিভাবে বাস্তবায়িত হবে তাও অনুমান করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকে । অর্থাৎ সঠিক পূর্বানুমান ভবিষ্যৎ ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা দূর করতে সহায়তা করে ।

৪. পরিকল্পনার উদ্দেশ্যমুখিতা (Goal-orientation of planning) : পরিকল্পনা সবসময়ই একটি উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যকে সামনে রেখে নিরূপিত হয় । যদি কোনো প্রতিষ্ঠান ১০% উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় তবে উক্ত উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য বিক্রয় বৃদ্ধি, মেশিনের শ্রমঘণ্টার অপচয় হ্রাস বা যন্ত্রপাতি উন্নয়ন, প্রয়োজনে  শ্রমিক-নতুন কর্মী নিয়োগ, অতিরিক্ত কাঁচামাল সংগ্রহ ইত্যাদি সকল বিষয়ে অতিরিক্ত পরিকল্পনা নেয়ার প্রয়োজন পড়ে । 

৫. পরিকল্পনার তথ্য নির্ভরশীলতা (Dependency of information of planning) : অতীতকে বাদ দিয়ে ভবিষ্যৎ চিন্তা করা যায় না। তাই পরিকল্পনা প্রণয়নে সব সময়ই অতীতে কী ঘটেছে তার মূল্যায়ন করতে হয়। এজন্য বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তা বিশ্লেষণের প্রয়োজন দেখা দেয় । শুধু প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ই নয় বাইরের বিভিন্ন বিষয়ও বিবেচনার প্রয়োজন পড়ে। প্রয়োজনে বিভিন্ন পক্ষের নিকট থেকেও তথ্য সংগ্রহ করতে হয় । এতে পরিকল্পনার মান বৃদ্ধি পায়।

৬. উত্তম বিকল্প (Best alternative) : বিকল্পসমূহের মধ্য থেকে বাস্তবতা বিবেচনায় সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বিকল্পটিকেই উত্তম বিকল্প বলে । পরিকল্পনা বলতে কার্যত উত্তম বিকল্প গ্রহণকে বুঝায় । উদ্দেশ্যার্জনে একাধিক বিকল্প পন্থা অনুসরণ করা যেতে পারে । বিকল্পসমূহের মধ্য হতে সবদিক বিচারে উত্তম বিকল্প গ্রহণই পরিকল্পনা হিসেবে গৃহীত হয় । ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার একাধিক বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে একজন ব্যক্তি যে রুট ঠিক করবে তাই পরিকল্পনার আওতায় আসবে ।

Content added By

উত্তম বা আদর্শ পরিকল্পনার গুণ বা বৈশিষ্ট্য

মি. হক একটা শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যবস্থাপক । প্রতিষ্ঠানের প্রতিটা কাজে তিনি হিসাব করে চলেন । নতুন বছর শুরু হওয়ার আগেই তিনি চলতি বছরের সর্বশেষ হিসাব বিভাগীয় ব্যবস্থাপকগণের নিকট থেকে সংগ্রহ করে ও পূর্ববর্তী বছরগুলোর হিসাব বিবেচনায় নিয়ে তার ওপর একটা ভাবনা দাঁড় করান । অতঃপর বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী বছরের মূল প্রতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেন । ধরা যাক, নির্ধারিত হলো সামনের বছরে চলতি বছরের তুলনায় ২০% বিক্রয় বৃদ্ধি করতে হবে । সে অনুযায়ী তিনি উৎপাদন ও বিক্রয় ব্যবস্থাপকদের স্ব স্ব বিভাগীয় পরিকল্পনায় ৩০% বৃদ্ধির টার্গেট ধরে ত্রৈমাসিক বিভাজনসহ বিভাগীয় পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দিলেন । বিভাগসমূহের লিখিত পরিকল্পনা তার নিকট জমা হলে তিনি ত্রুটি- বিচ্যুতি সংশোধন করে পরিকল্পনা অনুমোদন করলেন । অতঃপর প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য ও বিভাগীয় পরিকল্পনাসমূহ লিখিত আকারে বিভাগগুলোতে পাঠানো হলো । প্রয়োজনে তিনি স্ব-স্ব বিভাগে যেয়ে বসে তাদের টার্গেট ও করণীয় ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিলেন । সমস্যা থাকলে তার সমাধানের পন্থাও নির্দেশ করলেন । বছর শেষে দেখা গেল প্রতিষ্ঠানটি তার টার্গেট পূরণে সফল হয়েছে ।

মি. হকের প্রতিষ্ঠানের গৃহীত পরিকল্পনাকে উত্তম পরিকল্পনা হিসেবে বিবেচনা করা হলে তার যে সকল বৈশিষ্ট্য আলোচনার দাবি রাখে তা নিম্নরূপ:

১. সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য (Specific objective) : কাঙ্ক্ষিত ফল যাকে ঘিরে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাকেই প্রতিষ্ঠানের বা কাজের উদ্দেশ্য বলে । পরিকল্পনা প্রণয়নে এর সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য প্রথমেই নির্ধারিত হওয়া আবশ্যক । উদ্দেশ্যবিহীন পরিকল্পনা কখনই কার্যকর ফল দিতে পারে না । তাই একটি আদর্শ পরিকল্পনা অবশ্যই সুস্পষ্ট উদ্দেশ্যকেন্দ্রিক হয়ে থাকে । প্রতিষ্ঠানে সামগ্রিক একটা উদ্দেশ্য যেমনি থাকে তার আলোকে প্রত্যেক বিভাগ-উপবিভাগেরও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় ।

২. বাস্তবমুখিতা (Reality oriented) : পরিকল্পনা অবশ্যই বাস্তবমুখী হতে হয়। বাস্তবমুখিতা বলতে ভবিষ্যৎ অবস্থা বিবেচনায় পরিকল্পনা বাস্তবায়নযোগ্য হওয়াকে বুঝায় । বৃহত্তর উদ্দেশ্য এবং তার আলোকে একটি বড় ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করলেই তা সুফল দিতে পারে না। অবাস্তব পরিকল্পনা সবার মাঝে তাৎক্ষণিক কিছুটা আশাবাদ সৃষ্টি করতে সমর্থ হলেও কার্যক্ষেত্রে তা কখনই কাঙিক্ষত ফল দেয় না। বরং পরবর্তীতে তা হতাশা ও নানান ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করে ।

৩. গ্রহণযোগ্যতা / পালনযোগ্যতা (Acceptability) : পরিকল্পনা যারা বাস্তবায়ন করবে তাদের কর্তৃক উক্ত পরিকল্পনা পালনযোগ্য মনে করে সাদরে গ্রহণ করাকেই পরিকল্পনার গ্রহণযোগ্যতা বলে । পরিকল্পনা যাদের দ্বারা বাস্তবায়িত হবে তাদের নিকট এটি গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত। কর্মীরা যদি পরিকল্পনাকে কোনো কারণে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে না পারে তবে তার সঠিক বাস্তবায়ন আশা করা যায় না । এজন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা বা অংশীদারিত্বমূলক ব্যবস্থাপনা (Participative management)-এর প্রতি আজকাল গুরুত্বারোপ করা হয় ।

৪. সঠিক পথ-নির্দেশনা (Proper guidance) : বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত করণীয় বিষয়ে পরিকল্পনা থেকে যেন নির্দেশনা পাওয়ার সম্ভব হয় এটা নিশ্চিত করাকেই পরিকল্পনার সঠিক পথনির্দেশনা বলে । একটা প্রণীত পরিকল্পনা অবশ্যই সঠিক পথ নির্দেশক হওয়া উচিত। যাতে তা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে সঠিক পথ-নির্দেশ করতে পারে। এজন্যই Koontz & O. Donnell পরিকল্পনাকে দর্পন (Looking glass) এর সাথে তুলনা করেছেন । কী কী কাজ করা হবে পরিকল্পনা তার দিক নির্দেশে ব্যর্থ হলে সেক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়াই স্বাভাবিক । এজন্য যতদূর সম্ভব পরিকল্পনা বিশদ বর্ণিত ও পূর্ণাঙ্গ হওয়া উত্তম ।

৫. সমন্বয় ও যোগসূত্র (Co-ordination and linkage) : বিভিন্ন পর্যায়ে গৃহীত পরিকল্পনাকে মূল লক্ষ্যের আলোকে একসূত্রে সংযুক্ত করার কাজই হলো পরিকল্পনায় সমন্বয় ও যোগসূত্র স্থাপন । প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরেই যেহেতু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয় তাই একটি আদর্শ পরিকল্পনায় সকল স্তর বা বিভাগের মধ্যে সমন্বয় ও যোগসূত্র রক্ষা করা হয়ে থাকে । প্রতিষ্ঠানের মূল পরিকল্পনা-পূর্ব সময়ে গৃহীত পরিকল্পনার সাথে এবং বিভিন্ন স্তরে গৃহীত পরিকল্পনা মূল পরিকল্পনার সাথে সমন্বিত হওয়া আবশ্যক। বিক্রয় বিভাগ ও উৎপাদন বিভাগের পরিকল্পনায় যোগসূত্রিতা না থাকলে উভয় পরিকল্পনায় যে অকার্যকর-তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।

৬. নমনীয়তা (Flexibility) : পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতি বিধানের সামর্থ্যকে নমনীয়তা বলে। একটি উত্তম পরিকল্পনায় নমনীয়তার সুযোগ থাকা আবশ্যক । সম্ভাব্য যে সকল আবস্থার মধ্য দিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে বলে ধরে নিয়ে পরিকল্পনা প্রণীত হয় তা সবসময় মিলবে এমন আশা করা যায় না । তাই অবস্থার পরিবর্তন হলে যতটা সম্ভব দ্রুততার সাথে পরিকল্পনা সংশোধন করতে হয়। পরিকল্পনা প্রণেতাগণ যদি আগে থেকে বিকল্প অবস্থায় করণীয় ঠিক করে রাখেন সেক্ষেত্রে এরূপ পরিবর্তন সহজ হয়ে থাকে। যাকে পরিস্থিতিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা বলে । নমনীয় বাজেট (Flexible budget) তৈরি এর একটি উত্তম উদাহরণ ।

Content added By

শুভ খেলাধুলায় খুবই ভালো । ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন সবই ভালো খেলে । তার সতীর্থ ইমন শুধু ক্রিকেট খেলে । শুভ কোনো খেলাতেই স্থানীয় পর্যায়ের গণ্ডি পেরুতে পারেনি । কিন্তু ইমন এখন জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলছে । ইমনের ভালো করার কারণ সে লক্ষ্য ঠিক করে সেভাবে পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছে । যা শুভর পক্ষে সম্ভব হয়নি । ব্যবস্থাপনা বিষয়ের অন্যতম লেখক অধ্যাপক নিউম্যান তাঁর Administrative Action গ্রন্থে একটা উদাহরণ দিয়ে লক্ষ্য ও পরিকল্পনার মধ্যকার সম্পর্ক তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘একটা বিমান সংস্থা তার কার্যক্রম নির্ধারণ, এয়ারক্রাফট সংগ্রহ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নির্বাচন, কর্মী সংগ্রহ ইত্যাদি যে কোনো কাজ শুরুর পূর্বে অবশ্যই স্থির করবে যে, তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য যাত্রী পরিবহন না মালামাল পরিবহন ।' এটা ঠিক না। হলে কখনই পরিকল্পনা গ্রহণ ও লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না ।

পরিকল্পনার অভিপ্রেত ফলকে লক্ষ্য বলে । পরিকল্পনা সবসময়ই লক্ষ্যাভিমুখী । লক্ষ্য নির্ধারণ যেমনি একটি পরিকল্পনা তেমনি এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে কর্মপন্থা ঠিক করা হয় তাও পরিকল্পনা । মানুষ ভাল-মন্দ যা-ই করুক না কেন তার একটা লক্ষ্য থাকে । কারণ সচেতন মানুষ লক্ষ্যহীন উদভ্রান্তের মতো কোনো কাজ করতে পারে না । কাজ শুরুর পূর্বেই তার লক্ষ্য কী অর্থাৎ এ কাজ থেকে কী পাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে তা বুঝে নেয়ার প্রয়োজন পড়ে । অতঃপর তার আলোকে পরিকল্পনা প্রণীত হয়ে থাকে ।

ব্যবস্থাপনা একটি প্রক্রিয়া যার অধীনে পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ কার্য পারস্পরিক ধারাবাহিকতায় সম্পন্ন হয় এবং তা নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্পাদন করা হয়ে থাকে । তাই ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের মূলে থাকে একটা লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্যই প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নেওয়া হয় ও ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় । ধরা যাক, একটা প্রতিষ্ঠান আগামী বছরে তাদের বিক্রয়ের পরিমাণ ২৫% বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে । এখন সেভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি, বাজারজাতকরণ প্রসার কর্মসূচি তৈরি, বাজার সম্প্রসারণ, অর্থসংস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরিকল্পনা নেবে । প্রত্যেকটা বিভাগ প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্যকে সামনে রেখে অধিলক্ষ্য (Sub-goal) নির্ধারণ করবে ও সে অনুযায়ী পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হবে । এভাবে লক্ষ্য সকল কর্মকাণ্ডের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে । বিষয়টিকে নিম্নের রেখাচিত্রের সাহায্যে তুলে ধরা যেতে পারে :

চিত্র : লক্ষ্যের সাথে পরিকল্পনা ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা কাজের সম্পর্ক

লক্ষ্যের প্রকারভেদ (Types of goal in plan)

লক্ষ্য একটা সাধারণ পরিভাষা । পরিকল্পনার ভিন্নতা থাকায় লক্ষ্যকেও নানানভাবে নানান অভিধায় নামকরণ করতে দেখা যায় । প্রতিষ্ঠান ভেদেও একেক স্থানে লক্ষ্যকে একেক নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে । বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ বিচারে বিষয়টিকে নিম্নে আলোচনা করা হলো :

ক) প্রকৃতি বিচারে:

১. উদ্দেশ্য (Objectives) : উদ্দেশ্য হলো অভিপ্রেত লক্ষ্য যাকে ঘিরে কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় । যে কোনো কার্য সম্পাদনের পিছনে সম্পাদনকারীর একটা উদ্দেশ্য ক্রিয়াশীল থাকে । ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পিছনে ব্যবসায়ীর উদ্দেশ্য থাকে মুনাফা অর্জন করা। একটা ক্লাব, পাঠাগার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল ইত্যাদির ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকে । যাকে ঘিরেই তার কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় । প্রতিষ্ঠানের স্বপ্ন, দূরকল্পনা বা সাধারণ উদ্দেশ্যকে (Vision) বলে ।

২. মিশন (Mission): মিশন লক্ষ্যের আরেকটি রূপ । ইংরেজি Mission শব্দের বাংলা অর্থ হলো ব্রত, সাধনা বা প্রচেষ্টা । পূর্বে মিশন শব্দটি ধর্মীয় ব্রত বা সাধনার সাথে সম্পর্কযুক্ত মনে করা হলেও এখন সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানেই মিশন শব্দের ব্যবহার লক্ষণীয়। একটা শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উন্নত পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের প্রয়াসকে মিশন হিসেবে দেখা যায়। একটা ব্যাংকের ক্ষেত্রে ‘উত্তম ব্যাংকিং সেবা সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন'কে মিশন হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে । তাই মিশন কর্মলক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত ।

৩. সময় লক্ষ্য (Time Goal): সময় লক্ষ্যও লক্ষ্যের একটা গুরুত্বপূর্ণ ধারণা । একটা কাজ কত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে এটা নির্ধারণকেই সময় লক্ষ্য বলে । অনেক সময় এরূপ লক্ষ্য সকল কর্মকাণ্ডের মূল লক্ষ্যবিন্দু বিবেচিত হয় । যেমন- একটা নির্মাণ কোম্পানি বিল্ডিং নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছে । তাদেরকে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে দু'বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে অন্যথায় নির্মাণ চুক্তি বাতিল হবে এবং নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে । এক্ষেত্রে দু'বছর সময়কে সময় লক্ষ্য বলা হবে ।

৪. বাজেট লক্ষ্য (Budget goal): প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশিত ফলাফল যখন সংখ্যায় প্রকাশ করা হয় তাকে বাজেট লক্ষ্য বলে । প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়, প্রাপ্তি-প্রদান ইত্যাদি আর্থিক অংককে সাধারণভাবে বাজেট মনে করা হয় । তবে সেক্ষেত্রে ঐ বাজেটের একটা লক্ষ্য থাকতে পারে যাকে বাজেট লক্ষ্য বা টার্গেট বলা হয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বিগত বছরের তুলনায় ২৫% বৃদ্ধির লক্ষ্যকে বাজেট লক্ষ্য বলা যায়। এভাবে উৎপাদন বিভাগের এক লক্ষ একক পণ্য উৎপাদনের পরিকল্পনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণিতে ৫০০ শিক্ষার্থী ভর্তির পরিকল্পনাকে বাজেট লক্ষ্য বা টার্গেট হিসেবে গণ্য করা যায় । যা লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে ।

খ) সাংগঠনিক স্তর বিচারে:

১. স্ট্র্যাটিজিক লক্ষ্য (Strategic goal): প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন নির্বাহীগণ প্রতিষ্ঠানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেন তাকে স্ট্র্যাটিজিক লক্ষ্য বলে । দশ বছরের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের মুনাফার হার ২০% এ উন্নীতকরণ, পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকায় বিভিন্ন মার্কেটে আরও নতুন তিনটি শাখা দোকান প্রতিষ্ঠা, পাঁচ বছরের মধ্যে বিক্রয়ের পরিমাণ বর্তমান অপেক্ষা তিন গুণ বৃদ্ধি ইত্যাদি এরূপ লক্ষ্যের উদাহরণ ।

২. বিভাগীয় বা কৌশলগত লক্ষ্য (Departmental or tactical goal): প্রতিষ্ঠানের মধ্য পর্যায়ের ব্যবস্থাপকগণ স্ট্র্যাটিজিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেন তাকে বিভাগীয় বা কৌশলগত লক্ষ্য বলে । বিক্রয় বৃদ্ধির স্ট্র্যাটিজিক লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য একটা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বিভাগ এক বছরে ২৫% উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে । এটিকে উৎপাদন বিভাগের বিভাগীয় বা কৌশলগত লক্ষ্য বলা হবে ।

৩. কার্যসম্বন্ধীয় লক্ষ্য (Operational goal): প্রতিষ্ঠানের নিচের পর্যায়ের উপবিভাগ বা কর্মকেন্দ্রগুলোতে বিভাগীয় লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য যে সকল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় তাকে কার্যসম্বন্ধীয় লক্ষ্য বলে । শ্রম ঘন্টার অপচয় রোধের জন্য যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে যে, যে কোনো মেশিনে ত্রুটি দেখা দেয়ার তিন ঘন্টার মধ্যে তা অবশ্যই মেরামত করা হবে- এটি কার্যসম্বন্ধীয় লক্ষ্যের উদাহরণ ।

Content added By

পরিকল্পনা প্রণয়নের ধাপ বা বিভিন্ন পদক্ষেপ

পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ । এটি একটি চিন্তন-মনন প্রক্রিয়া; যা প্রণয়নকালে ভবিষ্যৎ নানান বিষয় বিবেচনার প্রয়োজন পড়ে। এটি কোনো আবেগ বা শুধুমাত্র অনুমাননির্ভর কার্য নয়, বরং বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় পরিকল্পনা রচিত হয় । পরিকল্পনার ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরে পরিব্যপ্ত হওয়ায় এর উপরিস্তরে দীর্ঘমেয়াদি বা মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ফলে সেখানে পরিকল্পনা গ্রহণে যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা ও বিচার-বিশ্লেষণের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু মধ্য ও নিম্ন পর্যায়ে ঐ পরিকল্পনার আলোকে বিভাগীয় ও কার্যভিত্তিক যে সব পরিকল্পনা নেয়া হয় সেখানে বিচার-বিশ্লেষণের আবশ্যকতা স্বভাবতই কমে আসে । তথাপিও কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়নে যে সকল ধারাবাহিক পদক্ষেপ অনুসৃত হয় তা নিম্নে রেখাচিত্রের সাহায্যে তুলে ধরা হলো :

চিত্র : পরিকল্পনা প্রণয়নের বিভিন্ন পদক্ষেপ

রেখাচিত্রে প্রদর্শিত পদক্ষেপসমূহ নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :

১. ভবিষ্যৎ মূল্যায়ন (Evaluating future) : প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ শক্তি (Strength) ও দুর্বলতা (Weakness) এবং বাহ্যিক সুযোগ (Opportunity) ও বাধা (Threat) চিন্তায় নিয়ে ভবিষ্যৎ অবস্থা কেমন হতে পারে তার আগাম মূল্যায়নকে পরিকল্পনা প্রণয়নে ভবিষ্যৎ মূল্যায়ন বলে । এক্ষেত্রে বাইরের বিভিন্ন পক্ষ; যেমন- গ্রাহক, প্রতিযোগী, সরবরাহকারী ইত্যাদি পক্ষের প্রতিক্রিয়া গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার প্রয়োজন পড়ে । অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়; যেমন- আর্থিক সুযোগ-সুবিধা, যন্ত্রপাতির মান, ব্যবস্থাপক ও কর্মীদের দক্ষতা ইত্যাদিও এক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হয় । যার আলোকেই ভবিষ্যৎ মূল্যায়নে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানা যায় ।

২. লক্ষ্য নির্ধারণ (Establishing goal) : পরিকল্পনা গ্রহণের পূর্বে কোন ফল অর্জনের জন্য তা প্রণীত হবে পূর্বেই তা নির্ধারণকে পরিকল্পনার লক্ষ্য নির্ধারণ বলে । বাস্তব অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে ধারণা গ্রহণপূর্বক তার আলোকে প্রতিষ্ঠানের মৌলিক লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী বিভাগ ও উপ-বিভাগের লক্ষ্য ও অধি- লক্ষ্য (Sub-goal) নির্ধারণ পরিকল্পনার পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ ধাপ । ধরা যাক, একটা প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন বিগত বছরের তুলনায় ১০% ভাগ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । তবে তার আলোকে বিভিন্ন বিভাগের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে । এ সকল লক্ষ্য অবশ্যই সুস্পষ্ট এবং সমন্বিত হওয়া উচিত ।

৩. বিকল্প স্থিরকরণ (Determining the alternatives) : অনুমিত অবস্থার মধ্য দিয়ে কিভাবে লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে এ জন্য বিভিন্ন বিকল্প কার্যপদ্ধতি দাঁড় করানোর কাজকেই পরিকল্পনায় বিকল্প স্থিরকরণ বলে । ধরা যাক, ভবিষ্যতে কোনো বিশেষ দ্রব্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে । এখন এই বর্ধিত বাজারে কিভাবে একটা প্রতিষ্ঠান নিজেদের বিক্রয় বাড়াবে এজন্য বিভিন্ন বিকল্প; যেমন-মূল্য কমানো, বিজ্ঞাপন বাড়ানো, পণ্যের মান উন্নয়ন ইত্যাদি যেকোনো এক বা একাধিক বিষয় বিবেচনা করতে পারে । বিকল্পের সংখ্যা বেশি হলে তার মধ্য হতে একেবারে দুর্বল বিকল্প বাদ দিয়ে শক্তিশালী বিকল্পসমূহ নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে ।

৪. বিকল্পসমূহ মূল্যায়ন (Evaluation of alternatives) : দাঁড় করানো প্রতিটা বিকল্প তার সুবিধা- অসুবিধার আলোকে কতটা গ্রহণযোগ্য তা বিবেচনা করার কাজকেই বিকল্পসমূহ মূল্যায়ন বলে । এক্ষেত্রে বিকল্পসমূহ অনুমিত অবস্থা ও লক্ষ্যের আলোকে বিবেচনা করতে হয় । সাধারণ বিচারে কোনো বিকল্প সর্বোত্তম মনে হলেও প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় ঐ বিকল্প গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে । প্রয়োজনে প্রতিটা বিকল্পকে একেকটি প্রজেক্ট হিসেবে বিবেচনা করে তাতে সম্ভাব্য ব্যয়, প্রাপ্তব্য সুবিধা ও অসুবিধা পৃথকভাবে বিবেচনা করতে হয় ।

৫. সর্বোত্তম বিকল্প গ্রহণ (Selecting the best alternative) : বিকল্পসমূহ মূল্যায়নের পর প্রতিষ্ঠানের বাস্তবতার আলোকে কার্যকর বিকল্পটি খুঁজে বের করাকেই সর্বোত্তম বিকল্প গ্রহণ বলে । ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার একাধিক বিকল্প পথ রয়েছে । এখন কোনো ব্যক্তি কোন্ পথে সেখানে যাবে তা তার প্রয়োজন, সময় ও বাস্তব অবস্থার আলোকেই নির্ধারণ করতে হয় । বিজ্ঞাপন না বাড়িয়ে মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের কমিশনের পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়টি লাভজনক বিবেচিত হতে পারে । বাছাইকৃত বিকল্পটি কার্যকরী মৌলিক পরিকল্পনা হিসেবে গৃহীত হয় এবং তাকে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা হিসেবে রূপায়িত করা হয়ে থাকে ।

৬. সহায়ক পরিকল্পনা প্রণয়ন (Preparing derivative plans ) : মৌলিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কোনো সহায়ক বা সহযোগী ভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হলে তাকে সহায়ক পরিকল্পনা বলে। মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রয়োজনেই অনেক সময় প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সহায়ক পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে । ধরা যাক, একটা বিমান কোম্পানি কয়েকটা নতুন বিমান ক্রয়ের পরিকল্পনা নিচ্ছে। এখন এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কতকগুলো সহায়ক পরিকল্পনা নিতে হবে; যেমন-ক্রু সংগ্রহ, তাদের প্রশিক্ষণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা সৃষ্টি ইত্যাদি ।

সবশেষে বলা যায়, নিয়মতান্ত্রিক ও স্থায়ী পরিকল্পনার ক্ষেত্রে উপরোক্ত ধারাবাহিক পদক্ষেপ খুবই ফলপ্রদ হলেও একার্থক বা জরুরিভাবে গৃহীত পরিকল্পনার ক্ষেত্রে উপরোক্ত ধারাবাহিক প্রক্রিয়া সবসময় অনুসরণ করা যায় না । তবে যতদূর সম্ভব উপরে বর্ণিত প্রক্রিয়া অনুসরণে এক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে ।

Content added By

পরিকল্পনার প্রণয়নে বিবেচ্য বিষয়সমূহ

পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার শুধুমাত্র প্রথম কাজই নয় এটি অন্যান্য ব্যবস্থাপকীয় কাজেরও ভিত্তিস্বরূপ । তাই যথার্থ পরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কাজের ফলপ্রদতা নির্ভরশীল । একটি কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে যে সকল বিষয় বিবেচ্য তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

১. প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য (Organizational objects): প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য নির্ধারণ পরিকল্পনার একটা অংশ হলেও এরূপ উদ্দেশ্যের আলোকে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে উদ্দেশ্য নির্ধারণ ও তা অর্জনের জন্য পরিকল্পনা প্রণীত হয় । তাই পরিকল্পনা প্রণয়নে অবশ্যই এর প্রণেতাগণকে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যকে সামনে রাখার প্রয়োজন পড়ে ।

২. অধস্তনদের মান ও অবস্থা (Qualities and conditions of subordinates): পরিকল্পনা প্রণয়নে অধস্তন জনশক্তির মান ও অবস্থাও বিবেচ্য। পরিকল্পনা অধস্তনদের দ্বারা বাস্তবায়িত হয়। তাই পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় গৃহীত পরিকল্পনায় অধস্তনদের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে তা আগাম বিবেচনার প্রয়োজন পড়ে ।

৩. পূর্বে গৃহীত পরিকল্পনার কার্যকারিতা (Effectiveness of previous plan) : পরিকল্পনা প্রণয়নে পূর্ব সময়ে গৃহীত পরিকল্পনার ফলাফল অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় উঠে আসা সংশোধনমূলক ব্যবস্থা বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। পূর্ব সময়ের গৃহীত পরিকল্পনার সঙ্গে কার্যাকার্যে যদি ব্যাপক বিচ্যুতি ঘটে তবে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ কষ্টসাধ্য হয় । অন্যথায় পরিকল্পনা প্রণয়ন সহজসাধ্য হয়ে থাকে ।

৪. প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান সমস্যা ও সম্ভাবনা (Existing problems and prospects of the organization): পরিকল্পনা প্রণয়নে প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান সমস্যা ও সম্ভাবনাও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য। প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান সমস্যার পরিমাণ বেশি হলে একভাবে পরিকল্পনা নিতে হয়। অন্যদিকে সমস্যা বেশি না হলে পরিকল্পনা ভিন্নভাবে নেয়া হয়ে থাকে ।

৫. প্রতিযোগীদের অবস্থা (Competitors condition): বর্তমান তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ ব্যবসায় জগতে পরিকল্পনা প্রণয়নে প্রতিযোগীদের অবস্থা ও তাদের গৃহীত কৌশল বিশেষভাবে বিবেচনার প্রয়োজন পড়ে । তবে প্রতিযোগীরা তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলে সাধারণ নিয়মে পরিকল্পনা তৈরি করে অগ্রসর হওয়া যায় ।

 ৬. প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও অন্যান্য সামর্থ্য (Financial and other abilities of organization): পরিকল্পনার ওপর প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও অন্যান্য সামর্থ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে । প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সামর্থ্য ভালো থাকলে পরিকল্পনা প্রণয়নে যেমনি প্রয়োজনীয় ব্যয় করা যায় তেমনি গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও এগিয়ে যাওয়া সহজ হয়।

৭. দেশের অর্থনেতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা (Economic and political situation of a country): দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থাও পরিকল্পনা প্রণয়নে বিবেচ্য। দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা যদি ভালো থাকে তবে পরিকল্পনা নিতে অনেক সুবিধা হয়। অন্যথায় পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে ।

উপসংহারে বলা যায়, উপরোক্ত বিবেচ্য বিষয়সমূহ যথাযথভাবে বিবেচনা করে পরিকল্পনা গ্রহণ করলে তা উত্তম পরিকল্পনা বিবেচিত হতে পারে । এজন্যই বর্তমানকালে বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানসমূহে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা প্রণয়নে সোট বিশ্লেষণ (SWOT analysis) করা হয়ে থাকে । এতে 'S' ও 'W' অভ্যন্তরীণ শক্তি (Strength) ও দুর্বলতা (Weakness) এবং 'O' ও 'T' বাহ্যিক সুযোগ (Opportunity) ও বাধা বা হুমকি (Tareat) নির্দেশ করে । এ সকল বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে পরিকল্পনা নিলে উক্ত পরিকল্পনা অবশ্যই বাস্তবমুখী হয়ে থাকে ।

Content added || updated By

পরিকল্পনা হলো ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের পূর্ব নির্ধারিত নক্শা বা চিত্র। এর ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠানের সকল স্তর পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত । একটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা গৃহীত হয় । বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতেও পরিকল্পনাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে । নিম্নে রেখাচিত্রের সাহায্যে পরিকল্পনার শ্রেণিবিন্যাস দেখানো হলো :

চিত্র : পরিকল্পনার প্রকারভেদ

রেখাচিত্রে বর্ণিত বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচিত হলো : 

ক) প্রকৃতিগত শ্রেণিবিভাগ (Classification on the basis of nature)

পরিকল্পনাকে তার প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয় । নিম্নে এগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :

১. লক্ষ্য (Goals) : পরিকল্পনার অভিপ্রেত ফলকে লক্ষ্য বলে । এরূপ অভিপ্রেত ফল বা লক্ষ্যার্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানের সকল উপায়-উপাদান ও কর্মপ্রচেষ্টাকে কাজে লাগানো হয় । কোনো প্রতিষ্ঠানে ১০% উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা এরূপ লক্ষ্যের একটি উদাহরণ। সার্বিকভাবে প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি লক্ষ্য ঠিক করা হয় এবং তার আলোকে বিভিন্ন বিভাগ বা স্তরে অধি-লক্ষ্য (Sub-Goal) নির্ধারণ করা হয় । পরিধি ও প্রকৃতি অনুযায়ী লক্ষ্যকে উদ্দেশ্য, মিশন, সময় লক্ষ্য, বাজেট লক্ষ্য বা কোটা, টার্গেট ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। (পরিকল্পনার লক্ষ্য শিরোনামের আলোচনা দ্রষ্টব্য)।

২. স্থায়ী পরিকল্পনা (Standing plan) : যে পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানে একবার গৃহীত হওয়ার পর নতুন কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ বা নতুন কোনো অবস্থা সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তা বারবার ব্যবহৃত হয় তাকে স্থায়ী পরিকল্পনা বলে । একই ধরনের সমস্যা বা অবস্থা মোকাবেলার জন্য এ ধরনের পরিকল্পনা প্রণীত হয় এবং বারে বারে তা ব্যবহৃত হয় । ফলে উর্ধ্বতনদের যেমনি নতুন নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা অধস্তনদের জানানোর প্রয়োজন পড়ে না তেমনি অধস্তনরা একই পরিকল্পনার আওতায় কাজ করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে ভুলের সম্ভাবনা হ্রাস পায় । যা সাংগঠনিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে । এরূপ পরিকল্পনা নিম্নোক্ত কয়েক ধরনের হতে পারে :

i) নীতি (Policy) : একই ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বনির্ধারিত আদর্শ বা সাধারণ নির্দেশনাকেই নীতি বলে । সিদ্ধান্ত গ্রহণে ও কার্যসম্পাদনে নীতি ব্যবস্থাপকদের বিশেষভাবে সহায়তা করে । কোনো প্রতিষ্ঠানে নগদ বিক্রয়ের নিয়ম বা জ্যেষ্ঠত্বের ভিত্তিতে পদোন্নতি প্রদান-এরূপ নীতির উদাহরণ ।

ii) প্রক্রিয়া (Process) : লক্ষ্যার্জনে পরস্পর নির্ভরশীল ধারাবাহিক কার্যসমষ্টিকে প্রক্রিয়া বলে । প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কার্যসমূহ একের পর এক নির্দিষ্ট থাকে । পরস্পর নির্ভরশীল থাকায় একের কাজ দ্বারা অন্যে প্রভাবিত হয় । সকল কাজের সফল সম্পাদন লক্ষ্যার্জন নিশ্চিত করে । কর্মী নির্বাচনের জন্য আবেদনপত্র গ্রহণ হতে শুরু করে নিয়োগ দান পর্যন্ত কর্মসমষ্টিকে প্রক্রিয়া বলা যেতে পারে ।

iii) পদ্ধতি (Procedure) : প্রক্রিয়ার অধীনে নির্ধারিত প্রত্যেকটি কার্য সম্পাদনের জন্য গৃহীত কার্যক্রমকে পদ্ধতি বলে । কর্মী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ একটা অন্যতম উপায় বা পদ্ধতি । এই লিখিত পরীক্ষা কিভাবে নেয়া হবে-এ সম্পর্কিত নিয়মকে পদ্ধতি বলা যায় ।

iv) কৌশল (Technique) : কৌশল হলো এক ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরিকল্পনা । প্রতিযোগী ফার্ম কর্তৃক গৃহীত পরিকল্পনাকে কিভাবে মোকাবিলা করা হবে তার জন্য পূর্বনির্ধারিত নীতিকে কৌশল বলে। উৎপাদিত দ্রব্য সরাসরি ভোক্তাদের নিকট সরবরাহের নীতি- কৌশলের একটি উদাহরণ ।

৩. একার্থক পরিকল্পনা (Single-use plan) : যে পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র একবার ব্যবহারের জন্য বা একটি মাত্র উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রণয়ন করা হয় তাকে একার্থক পরিকল্পনা বলে । যে সকল কার্যক্ষেত্রে অবস্থা দ্রুত পরিবর্তন হয় বা ফরমায়েশ অনুযায়ী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় সেখানে একার্থক পরিকল্পনা উত্তম বিবেচিত হয়ে থাকে । প্রতিষ্ঠানে কোনো বিশেষ অবস্থা মোকাবেলার জন্য এ ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হতে পারে । প্রতিষ্ঠানে কিছু যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন মেরামত না করার কারণে নষ্ট হওয়ায় যথেষ্ট শ্রম ঘণ্টার অপচয় হচ্ছে এরূপ অপচয় একেবারে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য গৃহীত বিশেষ কর্মসূচি এরূপ পরিকল্পনার উদাহরণ । সময়ের অভাবে এরূপ পরিকল্পনার পরিবর্তন আনা অনেকসময়ই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে । এ ধরনের পরিকল্পনাকে দু'টি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়; যা নিম্নরূপ :

i) কর্মসূচি (Programme) : কোনো বিশেষ লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে বড় ধরনের পরিকল্পনা গৃহীত হয় তাকে কর্মসূচি বলে । বাংলাদেশের খাবার পানিতে আর্সেনিক দূষণ রোধ করার জন্য গৃহীত বড় ধরনের পরিকল্পনা এর উদাহরণ । পোলিও রোগ নিরূপণের জন্য গৃহীত পরিকল্পনা, প্রতিষ্ঠানের পুরনো সকল যন্ত্রপাতি সরিয়ে নতুন যন্ত্রপাতি বসানোর পরিকল্পনাকে কর্মসূচি বলা যায় ।

ii) প্রকল্প (Project) : কর্মসূচির আওতায় বিশেষ বিশেষ কার্য সম্পাদনের প্রতিটা পরিকল্পনাকে প্রকল্প বলে । আর্সেনিক দূষণ রোধে অনেকগুলো পরিকল্পনার সাথে দূষণযুক্ত টিউবওয়েল শনাক্তকরণের পরিকল্পনাকে একটা প্রকল্প হিসেবে গণ্য করা যায়। একাধিক শ্রেণিবিন্যস্ত তালিকার মধ্য থেকে ক তালিকাভুক্ত যন্ত্রপাতি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুনঃসংস্থাপনের কার্যক্রমকে প্রকল্প হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে ।

খ) মেয়াদভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ (Classification on the basis of time period)

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মেয়াদের ভিত্তিতেও পরিকল্পনা গৃহীত হতে দেখা যায়। এরূপ ভিত্তিতে পরিকল্পনাকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায় :

১. স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা (Short-term plan) : সাধারণত এক বৎসর বা তার কম সময়ের জন্য গৃহীত পরিকল্পনাকে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা বলে । প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় ও উপবিভাগীয় পর্যায়ে যে সকল পরিকল্পনা গৃহীত হয় তা স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার উদাহরণ । বার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় ত্রৈমাসিক, মাসিক বা সাপ্তাহিক পরিকল্পনার সবগুলোকেই এ ধরনের পরিকল্পনা গণ্য করা যায় ।

২. মধ্যমমেয়াদি পরিকল্পনা (Mid-term plan) : এক বৎসরের অধিক ও সর্বোচ্চ পাঁচ বৎসর সময়ের জন্য গৃহীত পরিকল্পনাকে মধ্যমমেয়াদি পরিকল্পনা বলে । ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট লেভেলে এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এ ধরনের মধ্যম মেয়াদি পরিকল্পনা গৃহীত হতে দেখা যায় । সরকারের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এর একটি উদাহরণ ।

৩. দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা (Long-term plan) : পাঁচ বৎসরের অধিক যেকোনো সময়ের জন্য এ ধরনের পরিকল্পনা গৃহীত হয় । ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে যে স্ট্র্যাটিজি নির্দিষ্ট করা হয় তা এ ধরনের পরিকল্পনার উদাহরণ । কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানসমূহ যে সকল স্ট্রাটিজিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে- তা এর মধ্যে পড়ে । বাংলাদেশ সরকারের Vision 2021 এর ঘোষণা এর অন্তর্ভুক্ত ।

গ) সংগঠন কাঠামোভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ (Classification on the basis or organization structure)

 প্রতিষ্ঠানের সংগঠন কাঠামোর কোন পর্যায়ে কোন পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে তা অনুসারেও পরিকল্পনাকে ভাগ করা যায়; যেগুলো নিম্নরূপ :

১. স্ট্র্যাটিজিক বা কৌশলগত পরিকল্পনা (Strategic plan) : তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তমূলক কোনো পরিকল্পনা গ্রহণকে স্ট্র্যাটিজিক পরিকল্পনা বলে । স্বাভাবিকভাবেই এরূপ পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্বাহীদের কর্তৃক দীর্ঘ চিন্তা-ভাবনা সহযোগে প্রণীত হয় । এরূপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সংগঠনের নিচের স্তরে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে । প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পণ্যসারিতে নতুন ১০টি আইটেম অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে-এটি স্ট্র্যাটিজিক পরিকল্পনার উদাহরণ ।

২. কার্যভিত্তিক পরিকল্পনা (Functional plan) : প্রতিষ্ঠানের স্ট্রাটিজিক বা কৌশলমূলক পরিকল্পনার আলোকে প্রতিষ্ঠানের মধ্য ও নিম্ন পর্যায়ে স্বল্প সময়ের জন্য বাস্তবায়নমূলক যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তাকে কার্যভিত্তিক পরিকল্পনা বলে । এরূপ পরিকল্পনা সাধারণত নিম্নরূপ হয়ে থাকে:

ক. বিভাগীয় পরিকল্পনা (Departmental plan) : প্রতিষ্ঠানের পৃথক পৃথক বিভাগের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলে তাকে বিভাগীয় পরিকল্পনা বলে । কার্যভিত্তিক বিভাগ খোলা হলে সেক্ষেত্রে উৎপাদন, ক্রয়, বিক্রয় ইত্যাদি বিভাগের জন্য প্রণীত পরিকল্পনা এর মধ্যে পড়বে। এরূপ বিভাগের অধীন উপবিভাগ ও কর্মকেন্দ্রের পরিকল্পনাও এর অধীন । দ্রব্যভিত্তিক বিভাগ খোলা হলে সেক্ষেত্রে বিভিন্ন দ্রব্যভিত্তিক বিভাগের গৃহীত পরিকল্পনা-এ ধরনের পরিকল্পনা বিবেচিত হবে ।

খ. আঞ্চলিক পরিকল্পনা (Regional plan) : যে সকল প্রতিষ্ঠানের কার্যাদি বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তৃত থাকে সেক্ষেত্রে আঞ্চলিকভাবেও পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায় । বহুজাতিক কোম্পানিসমূহ তাদের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ের জন্য আলাদা আলাদা পরিকল্পনা নিলে তা আঞ্চলিক পরিকল্পনা হিসেবে গণ্য হয়। একটা প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় বিভাগ বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য জোনাল পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে । 

গ. মাস্টার বা সামগ্রিক পরিকল্পনা (Master plan) : কোনো প্রতিষ্ঠানের সকল বিভাগ বা অঞ্চলের পরিকল্পনাকে একত্রিত করে যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় তাকে সামগ্রিক বা মাস্টার পরিকল্পনা বলে। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগীয় বাজেট সমন্বয়ে ‘মাস্টার বাজেট' তৈরি এরূপ সামগ্রিক পরিকল্পনার উদাহরণ ।

Content added By
মধ্যম মেয়াদী পরিকল্পনা
একার্থক পরিকল্পনা
স্থায়ী পরিকল্পনা
কৌশলগত পরিকল্পনা
স্ট্র্যাটিজিক পরিকল্পনা
এর্কাথক পরিকল্পনা
স্থায়ী পরিকল্পনা
মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা

সদ্য পাসকরা মি. হাবীব বাবার গড়া নতুন শিল্প ইউনিটের দায়িত্ব নিয়েছেন । বাবাকে রাতদিন ব্যবসায় নিয়ে যেভাবে ভাবতে দেখেছেন তা তার নিকট পছন্দের মনে হয়নি । তার ভাবনা, এত সিরিয়াস হওয়ার কী আছে । নতুন জনশক্তি নিয়োগ করতে হবে । বাবাকে বললেন, কী কী পদে লোক নিয়োগ দিতে হবে- এটা ঠিক করে দাও । এরপর আমি আমার পছন্দমতো লোক নিয়ে নেবো । বাবা বললেন, আগে ভাবো কী মানের, কোন ধরনের লোক, কোত্থেকে, কিভাবে সংগ্রহ করতে হবে । পরিকল্পনা নিয়ে কাজ না করলে সমস্যায় পড়বে । মি. হাবীবের ভাবনা, মানুষ তো সব শিখে আসে না । করতে করতে শিখবে । তিনি অভিজ্ঞ লোক নিয়োগের বিষয়টি মাথায় না নিয়ে সদ্য পাস করা ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়েছেন । নিয়োগ দিতে যেয়ে প্রতিষ্ঠানের যে সু-নির্দিষ্ট নিয়ম-পদ্ধতি ছিল তা না মেনে বন্ধু-বান্ধবদের সুপারিশ আমলে নিয়েছেন । প্রতিষ্ঠান চালাতে যেয়ে এখন তিনি হাড়ে হাড়ে সমস্যা অনুভব করছেন। না নিজে তেমন কিছু বুঝছেন না কারও সহযোগিতা পাচ্ছেন । তাই প্রতিষ্ঠান আর ঠিকমতো চলছে না । তিনি বুঝতে পারছেন আবেগ দিয়ে ব্যবসায় চলে না । ভেবে-চিন্তে পরিকল্পনা মাফিক ব্যবসায় চালাতে না পারলে বিপদে পড়তেই হয় । পরিকল্পনার গুরুত্ব এখন তার নজরে এসেছে ।

উপরের উদ্দীপক বিবেচনায় নিলে এটা স্পষ্ট যে, পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজ বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয় । যা প্রতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জনকে ব্যাহত করে । বিভিন্ন দিক থেকে পরিকল্পনার গুরুত্ব নিম্নে তুলে ধরা হলো :

১. প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য অর্জন (Accomplishment of organisational objectives) : পরিকল্পনার প্রধান কাজ হলো কার্যক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দূর এবং ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা হ্রাসপূর্বক সহজতম পন্থায় ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা করা । পূর্ব পরিকল্পনা থাকায় নির্বাহী ও তত্ত্বাবধায়কগণ এর আলোকে সহজেই করণীয় নির্ধারণ ও কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে । তাই কার্যকর পরিকল্পনা উদ্দেশ্য অর্জনের ক্ষেত্রে একটি প্রথম ও প্রধান কার্য ব্যবস্থা ।

২. ব্যবসায়ের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ (Development and expansion of business) : পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরের ও বাইরের যে সকল সমস্যা ভবিষ্যতে মোকাবিলা করতে হতে পারে তা সতর্কতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করে তদনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় । যা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসায়ের ঝুঁকি হ্রাস ও অনিশ্চয়তা দূর করে এর কার্যকলাপ সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন সহজতর করে ।

৩. ব্যয় ও অপচয় হ্রাস (Minimization of cost and wastage) : আগে থেকে চিন্তা-ভাবনা করে কাজ শুরু করা হলে সেক্ষেত্রে বাহুল্য ব্যয় অনেকাংশে হ্রাস পায় । এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের সকল পর্যায়ে যদি বাজেট থাকে এবং বাজেটের ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালিত হয় তবে মিতব্যয়িতা অর্জন সহজ হয় । এ ছাড়া জনশক্তি ও অন্যান্য উপকরণের অপচয় হ্রাস করতেও পরিকল্পনা সাহায্য করে ।

৪. উপকরণাদির কার্যকর ব্যবহার (Effective utilization of resources) : যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সফলতা অর্জনে এতে নিয়োজিত মানবীয় ও বস্তুগত উপকরণাদির কার্যকর ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । সুষ্ঠু পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে কাজ করা হলে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত প্রত্যেকটি উপায়-উপকরণের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় । এর ফলশ্রুতিতে প্রত্যেকটি উপায়-উপকরণের কার্যদক্ষতা বাড়ে । আর দক্ষতার উন্নয়ন প্রাতিষ্ঠানিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও লক্ষ্যার্জন নিশ্চিত করতে পারে ।

৫. সঠিক কার্যধারা অনুসরণ (Following proper course of action) : পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা প্রদান করে । প্রতিষ্ঠানের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত প্রতিটি ব্যক্তি, বিভাগ ও উপ- বিভাগ পরিকল্পনার অধীনে কাজ করায় প্রত্যেকে তাদের করণীয় সম্পর্কে আগাম জানতে পারে । এতে মানসিক প্রস্তুতি সহকারে কার্য সম্পাদন সম্ভব হয় ।

৬. ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কাজ বাস্তবায়ন (Implementation of other managerial functions) : পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনার সমুদয় কাজের ভিত্তিস্বরূপ । পরিকল্পনা ছাড়া ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কাজ; যেমন-সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয়, নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কার্য সঠিকভাবে সম্পাদন করা যায় না । তাই পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কাজের সঠিক বাস্তবায়নে দিকনির্দেশনা প্রদান করে ।

Content added By

পরিকল্পনা হতে খুবই আশাপ্রদ ফল লাভ করা গেলেও এটি অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে এ কথা বলা যায় না । সাধারণভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সময় এরূপ সমস্যা দেখা দেয় । এরূপ সীমাবদ্ধতাসমূহ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :

১. পটভূমি বা অঙ্গন নির্ধারণে সমস্যা (Problems in premising) : যে অবস্থার মধ্য দিয়ে গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে তাকে পরিকল্পনার পটভূমি বা অঙ্গন বলে । ভবিষ্যৎ অবস্থা কী দাঁড়াবে তা সম্পূর্ণ অনুমান করা কষ্টসাধ্য । এজন্য পরিকল্পনার বাস্তবায়নকে প্রভাবিত করতে পারে এমন ভবিষ্যৎ অবস্থা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয় । কিন্তু অনেক সময় প্রাপ্ত তথ্যাদি নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য হয় না । সে কারণে সঠিক পটভূমি নির্ধারণ কঠিন হয় ।

২. সময়সাপেক্ষ (Time consuming) : সাধারণত বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে ব্যবসায়িক জটিলতা ও কার্যকলাপের আধিক্যহেতু পরিকল্পনা প্রণয়নে অত্যধিক সময় বিনষ্ট হয়। এ ছাড়া তথ্য সংগ্রহ, তথ্য বিশ্লেষণ, বিকল্প নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময় বেশি লাগে । যা অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর হয় ।

৩. ব্যয়সাপেক্ষ (Costly) : পরিকল্পনা অনেক সময় ব্যয়সাপেক্ষ হয় । অনেক সময় পরিকল্পনার খরচ অপেক্ষা এ হতে অর্জিত ফলাফল কম হয় । অনেক সময় পরিকল্পনা দক্ষতা অর্জনে কোনো ভূমিকা রাখে না ফলে ব্যবসায়ে মিতব্যয়িতা অর্জিত হয় না । সরকারি পর্যায়ে ক্ষেত্রে বিশেষে এমন অনেক পরিকল্পনা নেয়া হয় যা ব্যয় বাড়ায় কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার সুফল দেখতে পাওয়া যায় না ।

৪. মানসিক সমস্যা (Mental hazard) : সংগঠনের কর্মীরা সহজাতভাবে প্রচলিত ধ্যান-ধারণা, রীতি- নীতিতে বিশ্বাসী । তারা ভবিষ্যতের চাইতে বর্তমানকেই উত্তম বলে মনে করে । তাই নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে জনশক্তির মধ্যে নিরুৎসাহ দেখা দেয়। এটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও সমস্যার সৃষ্টি করে ।

৫. উদ্যোগ গ্রহণে বাধাদান (Obstacle to initiative) : পরিকল্পনাকে সমালোচনা করতে গিয়ে অনেকেই মন্তব্য করেন যে, পরিকল্পনা ব্যক্তির প্রতিভা বিকাশের অন্তরায়স্বরূপ এবং এটি ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে নিজস্ব মননশীলতায় ও ব্যক্তিগত চিন্তার পরিসরে কাজ করতে দেয় না । ফলে তা কর্মীকে উদ্যমহীন করে তুলতে পারে ।

৬. সংশোধনজনিত সমস্যা (Problem in correction) : পরিকল্পনা প্রণয়নে প্রজ্ঞার অভাব, দক্ষতার অভাব, ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নে সমস্যা ইত্যাদি কারণে পরিকল্পনা ত্রুটিযুক্ত থেকে যায় । এ ত্রুটি সংশোধনে অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয় ।

৭. আতিশয্যের প্রতি ঝোঁক (Tendency toward excessiveness) : পরিকল্পনা প্রণয়নকালে পরিকল্পনাবিদদের মধ্যে আতিশয্যের প্রতি বা বাড়তি কিছু করা যাবে এমন আশাবাদের প্রতি স্বাভাবিক ঝোঁক প্রবণতা লক্ষ করা যায়। অতীতে কী হয়েছে তার বিবেচনার চাইতে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অতিরিক্ত আশাবাদ উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা গ্রহণে পরিকল্পনাবিদদের অনেক সময়ই উৎসাহিত করে । যা কার্যক্ষেত্রে সঠিক দিক- নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয় ।

৮. বাহ্যিক সমস্যা সমাধানে অক্ষমতা (Inability to resolve external problems) : কিছু কিছু বাহ্যিক সমস্যা সমাধানে একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা ফলপ্রদ হয় না। কারণ, বাহ্যিক সমস্যা বাহ্যিক পরিবেশ হতে উদ্ভূত হয়। যেমন- সরকারি আমদানি ও রপ্তানি নীতি, কর নীতি, শ্রমিক ইউনিয়নের প্রভাব ইত্যাদি ।

পরিশেষে বলা যায় যে, পরিকল্পনার অনেক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ব্যবস্থাপকদের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে তথ্য ও জ্ঞানের অভাব, যথাসময়ে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে ব্যর্থতা এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্নমুখী জটিলতার কারণে পরিকল্পনা বাস্তবে কার্যকর ফল দিতে অনেক সময়ই ব্যর্থ হয় ।

Content added By

উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনার মধ্যে সম্পর্ক

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল অনেকদিন টেস্ট ক্রিকেট বিশ্ব র‍্যাংকিং-এ দশম স্থানে । কোনোভাবেই নবম অবস্থানে উঠে আসতে পারছে না। সামনে জিম্বাবুয়ে সফর। জিম্বাবুয়ে নবম অবস্থানে থাকলেও বাংলাদেশ থেকে তাদের পয়েন্ট পার্থক্য তেমন বেশি নয় । তাই বাংলাদেশ দল এবারের সফরের উদ্দেশ্য ঠিক করেছে যেভাবেই হোক জয় নিয়ে ফিরতে হবে । কোচ, খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাগণ সবাই সেভাবে ছক কাটছেন । তিন মাস আগে থেকেই খেলোয়াড়গণ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে কোচের অধীনে নিবিড় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। জিম্বাবুয়ের মাঠ বিবেচনায় একজন স্পিন বোলিং এর কোচ নিয়োগ দেয়া হয়েছে । জিম্বাবুয়ের প্রতিটা খেলোয়াড়ের বিভিন্ন খেলার ভিডিও ফুটেজ ধরে ধরে তাদের দূর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে । কোন খেলোয়াড়কে পরাস্ত করতে কোন বোলার উত্তম হবে ও কোন বোলারকে কিভাবে মোকাবেলা করা হবে তাও ঠিক করা হচ্ছে । দলের ফিল্ডিং-এর দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে তার উন্নয়নের প্রতিও নজর দেয়া হচ্ছে । এ সকল পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির কারণে সফর শেষে মূল্যায়ন হলো জিম্বাবুয়ে সফরে দল ভালো খেলেছে ও জয় নিশ্চিত হয়েছে। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য ঠিক করে সেভাবে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিতে পারাকেই জয়লাভের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাই উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে
সম্পর্কযুক্ত।

উদ্দেশ্য হলো চূড়ান্ত ফল যাকে ঘিরে প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় । লক্ষ্য হলো পরিকল্পনার অভিপ্রেত ফল । অর্থাৎ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রতিষ্ঠানে ভবিষ্যতে কী করা হবে, কখন ও কিভাবে করা হবে, ইত্যাদি বিষয় নির্ধারণ বা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। আর এরূপ লক্ষ্য ও পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ উদ্দেশ্যকে ঘিরে আবর্তিত হয়ে থাকে ।

উদ্দেশ্য নির্ধারণ সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অধীন। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য নির্ধারণের পর আবার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগ ও উপ-বিভাগের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হতে পারে। আবার সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বিভাগ ও উপ-বিভাগের পরিকল্পনা প্রণীত হয় । অর্থাৎ সকল পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য অর্জন করা । অধ্যাপক নিউম্যান প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনার মধ্যকার সম্পর্ককে একটা সুন্দর উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন; যা হলো-একটা বিমান সংস্থা এর কার্যক্রম নির্ধারণ, যন্ত্রপাতি নির্বাচন, কর্মী সংগ্রহ এবং কোনো কিছু যথাযথভাবে শুরুর পূর্বে অবশ্যই স্থির করবে যে, তাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হবে যাত্রী বহন না মালামাল বহন করা । উদ্দেশ্য ঠিক হলেই তখন উদ্দেশ্যার্জনের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।
উপরোক্ত আলোচনা হতে প্রতীয়মান হয় যে, সুস্পষ্টভাবে উদ্দেশ্য নির্ধারণ ছাড়া কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন সম্ভব নয় । পরিকল্পনা প্রক্রিয়ায় তাই উদ্দেশ্য নির্ধারণকে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অনেকেই উপস্থাপনের প্রয়াস পেয়েছেন । উদ্দেশ্য নির্ধারণ ও কৌশলগত দীর্ঘ বা মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়নের মধ্যকার সম্পর্ককে নিম্নে রেখাচিত্রের সাহায্য তুলে ধরা হলো :

চিত্র : উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনার মধ্যে সম্পর্ক
Content added By

সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধারণা

প্রতিনিয়ত আমরা নানান সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি । প্রতিষ্ঠানেও নানান প্রয়োজনেই প্রতিনিয়ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় । এই সিদ্ধান্তে ভুল হলে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে । যথাসময়ে যথাসিদ্ধান্ত নেয়া না গেলে তার ফল শুভ হয় না । মি. আরিফ অফিসের কাজে চট্টগ্রাম যাবেন । বিমানে, বাসে, ট্রেনে- নানানভাবেই যাওয়া যায়। তিনি কোন পথে যাবেন- এটা সিদ্ধান্তের বিষয়। বাসে গেলেও নানান বাস, তাই সেখানেও সিদ্ধান্তের প্রশ্ন। মিসেস নার্গিস দুপুরের রান্না করবেন। মেন্যু কী করবেন এখানেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে । মিস সামন্তার বেতন থেকে বেশ কিছু টাকা জমেছে । তিনি এই টাকা কী করবেন- এটাও সিদ্ধান্তের বিষয় । প্রতিষ্ঠানে বিক্রয় বৃদ্ধির চিন্তা করা হচ্ছে। বাজারজাতকরণ প্রসার কার্যসূচি বাড়ানো হবে না দ্রব্যমূল্য কমানো হবে- এটাও সিদ্ধান্তের প্রশ্ন। বাজারজাতকরণ কার্যসূচি বাড়ানো হলে বিজ্ঞাপন বেশি দেয়া হবে, মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের কমিশন বাড়ানো হবে না স্বল্পমেয়াদি বিক্রয় বৃদ্ধির কার্যসূচি; যেমন- পণ্যের সাথে কোনো কিছু ফ্রি, সাময়িক মূল্য হ্রাস ইত্যাদির মতো স্বল্পমেয়াদি কোনো কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে - এক্ষেত্রেও সিদ্ধান্তের প্রশ্ন এসে যায় । তাই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সব সময়ই নানান উপায়, পন্থা বা বিকল্প থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী উত্তম বিকল্পকে সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করে পথ চলে ।

যে কোনো সমস্যা সমাধান বা কর্মপন্থা গ্রহণে একাধিক উপায় বা বিকল্প থেকে সর্বোত্তম বিকল্প বাছাইকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ বলে। যেক্ষেত্রে কোনো বিকল্প থাকে না সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রশ্ন আসে না। মোটর গাড়ির টায়ার নষ্ট হয়েছে বদলাতে হবে এক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের প্রশ্ন আসছে না । কিন্তু বাজারে অনেক ব্র্যান্ডের টায়ার - রয়েছে- কোনটি কেনা হবে এটা সিদ্ধান্তের বিষয়। একজনের প্রচণ্ড ক্ষুধা পেয়েছে তাই খেতে হবে- এটাও সিদ্ধান্তের বিষয় নয় । কিন্তু যখনই খাওয়ার প্রশ্ন এলো তখন কী খাওয়া হবে এখানে নানান বিকল্প থাকতে পারে । তাই এখানে সিদ্ধান্তের বিষয়টি এসে দাঁড়াচ্ছে । ব্যবস্থাপনা কার্য চালাতে যেয়ে ব্যবস্থাপকদের প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় । পরিকল্পনা গ্রহণও সবসময়ই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত । কারণ পরিকল্পনা গ্রহণেও বিকল্প নির্ধারণ করে তার মধ্য থেকে উত্তম বিকল্পকে পরিকল্পনা হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে । একইভাবে সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা ইত্যাদি কাজেও নানান সিদ্ধান্ত নিতে হয় । একজন ব্যবস্থাপককে প্রতিনিয়ত তার কাজেও নানান সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। সেজন্য বলা হয় যে, ব্যবস্থাপনার মৌল কাজই হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ।

Content added By

সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা

টেলিভিশনে মোবাইল ফোন কোম্পানির একটা বিজ্ঞাপন । হঠাৎ করে কেউ কোনো কথা বলছে না । সবাই নির্বাক । ফ্যাল ফ্যাল করে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে । প্রাণের উচ্ছ্বাস নেই । হঠাৎ করে কথা শুরু হলো । যেনো দম ফেলে বাঁচলো মানুষগুলো । এখন কথা আর কথা । প্রাণের উচ্ছ্বাস ও আনন্দ ভাগাভাগি করার পালা । যদি ধরি একটা শিল্প প্রতিষ্ঠানে কেউ কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না, সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না, তাহলে কেমন হবে । বস (Boss) অফিসের চেয়ারে বসা। কাঁচামাল নেই । সরবরাহকারীদের সাথে আলাপ করে কাউকে সরবরাহের আদেশ দিতে হবে । বস সিদ্ধান্ত নেবেন না- তাই কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ । গুদামে মজুত মাল জমে আছে । কিছু দাম কমালে বা মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের একটু কমিশন বাড়ালে মালগুলো বিক্রয় হয়ে যায় । কিন্তু সংশ্লিষ্টরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না । কী অবস্থা হবে? শ্রমিকে-শ্রমিকে মারামারি করে উৎপাদন বন্ধ । করণীয় কী? সিদ্ধান্ত দিতে হবে । কিন্তু কেউ সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না । এভাবে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠানে যে নানান সিদ্ধান্ত নিতে হয় তা বন্ধ হয়ে গেলে প্রতিষ্ঠান কখনই চলতে পারবে না ।

একটা প্রতিষ্ঠানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে এর কাজকে গতিশীল রাখা হয়। করণীয় নির্দেশের ফলে অধীনস্থরা স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারে। সমস্যার দ্রুত সমাধান নির্দেশ করায় শুরুতেই তা সমাধান করা সম্ভব হয় । এভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজনীয় সকল মূহুর্তে প্রতিষ্ঠানের চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে । ব্যবস্থাপনার প্রতিটা কাজ পরিচালনায় সিদ্ধান্ত নিতে হয় । পরিকল্পনা গ্রহণে উত্তম বিকল্প বাছাইয়ের কাজ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাথে সম্পর্কীত । সংগঠনের ক্ষেত্রে কাজকে কিভাবে ভাগ করা হবে, কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা কিভাবে বন্টিত হবে- ইত্যাদি বিষয়েও শীর্ষ নির্বাহীদের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন পড়ে । কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোন উৎস থেকে জনশক্তি সংগ্রহ করা হবে, কর্মী বাছাই প্রক্রিয়া কী হবে, কোন ক্ষেত্রে কোন প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহৃত হবে ইত্যাদি বিষয়ও সিদ্ধান্তের সাথে যুক্ত । নির্দেশের বিষয় কী হবে, তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতি ব্যবহৃত হবে- এক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্ত নিতে হয় । এভাবে প্রেষণা দানে, সমন্বয় সাধনে এবং নিয়ন্ত্রণে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নির্দেশে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্পর্কযুক্ত হয়ে পড়ে। একটা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন, বিপণন, অর্থসংস্থান, জনশক্তি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটা অপরিহার্য কাজ । অর্থনীতির মৌলিক প্রশ্নসমূহ - কী উৎপাদন করতে হবে, কী পরিমাণে উৎপাদন করতে হবে, কী মূল্য নির্ধারিত হবে ইত্যাদি বিষয়গুলোর উত্তরের মূলে রয়েছে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেয়া । অর্থাৎ ব্যক্তিক ও প্রাতিষ্ঠানিক যে কোনো কর্মকাণ্ড গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত গ্রহণ একান্ত আবশ্যক ।

Content added By

সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া

যথাসময়ে যথাসিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর ব্যক্তিক ও প্রতিষ্ঠানিক সাফল্য নির্ভরশীল । তাই যেনোতেনোভাবে সিদ্ধান্ত নিলে তার ফল উল্টো হতে বাধ্য। সে কারণেই সিদ্ধান্ত নিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীকে অবশ্যই অত্যন্ত সচেতনতার সাথে সুবিধা-অসুবিধাসহ নানান বিষয় বিবেচনা করতে হয়। একজন চাকরিজীবীর কিছু টাকা জমেছে । সে এই টাকা দিয়ে সন্তানকে ভালো স্কুলে ভর্তি করে তার পিছনে অর্থ ব্যয় করতে পারে অথবা আরও কিছু টাকা আত্মীয়-স্বজন থেকে ঋণ করে একটা সস্তা ফ্ল্যাট বুকিং দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি কিস্তি বহনের ভার মাথায় নিতে পারে । এক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে । ব্যক্তির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতেই যেখানে নানান বিষয় বিবেচ্য সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অবশ্যই আরও গভীরভাবে নানান বিষয় ভাবতে হয় । অবশ্য সবক্ষেত্রেই এমন কিছু সিদ্ধান্ত থাকে যা সাধারণমানের এবং যেগুলো বিষয়ে প্রায়শই সিদ্ধান্ত দিতে হয় । এমন সকল ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়াটা কিছুটা সহজ। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহে সিদ্ধান্ত দিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীকে অবশ্যই অনেক বিষয় ভাবতে হয় এবং যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে কতকগুলো ধারাবাহিক পদক্ষেপ বিবেচনার বা প্রক্রিয়ার অনুসরণের প্রয়োজন পড়ে । সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার পদক্ষেপগুলো নিম্নে সংক্ষেপে আলোচিত হলো:

১. সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সংজ্ঞায়িতকরণ (Identifying and defining problems): জটিল বা অসুবিধাজনক কোনো বিষয় যা উত্তরণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ আবশ্যক এমন কোনো বিষয়কে সমস্যা হিসেবে দেখা হয়ে থাকে । কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সেটি যদি সঠিক সময়ে সঠিকভাবে চিহ্নিত করা না যায় তবে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয় না । সমস্যা সামনে আসলে তাকে সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করার অর্থাৎ সমস্যার প্রকৃতি, করণীয় নির্ধারণের আবশ্যকতা ইত্যাদি বিষয়ও ভেবে দেখতে হয় । এভাবে সমস্যা ও করণীয়কে যদি সঠিকভাবে চিহ্নিত ও অনুধাবন করা সম্ভব হয় তবে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ সহজ হয়ে থাকে ।

২. অগ্রাধিকার নির্ধারণ (Determination of priority): সমস্যার পরিমাণ একাধিক হলে এবং সবগুলো একসাথে সমাধান সম্ভব না হলে কোনটি আগে এবং কোনটি পরে করা হবে এ বিষয় নির্ধারণকেই অগ্রাধিকার নির্ধারণ বলে । এ ধরনের ক্ষেত্রে প্রথমে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা করণীয় নির্ধারণ করতে হবে এবং এরপর পরম্পরা কী হবে তাও ঠিক করার প্রয়োজন পড়ে । ধরা যাক, মেশিন আর কাজ করছে না তাই তা পুনঃস্থাপন করা প্রয়োজন, বিল্ডিং সম্প্রসারণের কাজ চলছে তাও চালানো দরকার এবং কাঁচামাল সরবরাহকারীদের অগ্রিম দিতে হবে- এই তিনটা বিষয়কে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার । এক্ষেত্রে যেহেতু কোনোটিই বাদ দেয়া যাচ্ছে না, তাই ফান্ড বিবেচনায় সিদ্ধান্তের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে । অন্যথায় কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে গেলে পরে তা সমস্যার কারণ হতে পারে ।

৩. তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ (Collection of data and information): কোনো বিষয়ে প্রকৃত অবস্থা, জ্ঞান, বিষয় বা সংবাদকে তথ্য বলে । এরূপ অবস্থা জানা বা সংবাদ সংগ্রহকে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ বলা হয়ে থাকে । এরূপ তথ্য ও উপাত্ত হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের মুখ্য অবলম্বন । সিদ্ধান্তগ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যতবেশি তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে সমর্থ হন তত বেশি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন । এরূপ তথ্য সংগ্রহ চিহ্নিত সমস্যা বা করণীয় বুঝতে যেমনি সহায়তা করে তেমনি সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন উপায় অনুসন্ধানেও সহায়তা দেয় । উল্লেখ্য, নতুন নতুন প্রযুক্তি, উপায় ও পদ্ধতি আবিষ্কারের ফলে তথ্য লাভ অনেক সহজ হয়েছে; যা সংগ্রহ ও বিবেচনা করা না গেলে সমস্যার গভীরতা উপলব্ধি এবং সমস্যা সমাধানে সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায় ।

৪. বিকল্পসমূহ উদ্ভাবন (Generation of alternatives): অনুমিত অবস্থার আলোকে সমস্যা সমাধানে সম্ভাব্য উপায়সমূহ দাঁড় করানোর কাজকেই বিকল্প উদ্ভাবন বলে । সিদ্ধান্ত গ্রহণে একজন ব্যবস্থাপককে সম্ভাব্য বিকল্পসমূহ কি হতে পারে তা উদ্ভাবন বা নির্দিষ্ট করতে হয় । ধরা যাক, একটা মেশিন পুনঃস্থাপন করতে হবে । তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মেশিনের দাম কেমন তা জানা গেছে । এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান এজন্য কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে রাজি আছে সে সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হয় । এরপর উদ্ভাবিত বিকল্পগুলোর মধ্য থেকে প্রয়োজনে একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা (Short list) তৈরি করা হয় । একজন ব্যক্তি অফিসের কাজে চট্টগ্রাম যাবেন । যাওয়ার বিকল্প কি হতে পারে তা প্রথমে জানা থাকলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়ে থাকে ।

৫. বিকল্পসমূহের মূল্যায়ন (Evaluation of alternatives): দাঁড় করানো প্রতিটা বিকল্প উপায় সুবিধা- অসুবিধার আলোকে কতটা গ্রহণযোগ্য তা বিবেচনা করার কাজকেই বিকল্পসমূহ মূল্যায়ন বলে । এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য ও সম্ভাবনা, দুর্বলতা ও ঝুঁকির দিকগুলো বিবেচনা করতে হয়। নতুন একটা শিল্প ইউনিট প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত, নতুন প্রকল্পে প্রয়োজনীয় মূলধন সংস্থানের সিদ্ধান্ত, নতুন বাজারজাতকরণ প্রসার কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিকল্পসমূহকে নানান বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করার প্রয়োজন পড়ে । চট্টগ্রামে বিভিন্ন পথে যাওয়ার বিকল্প মূল্যায়নে ব্যয় করার সামর্থ্যই শুধু নয় চট্টগ্রামে কাজের ধরন, যাত্রায় ব্যয়িত সময়ের পরিমাণ ইত্যাদি বিষয় সামনে রেখে বিকল্পসমূহ মূল্যায়ন করার প্রয়োজন পড়ে ।

৬. উত্তম বিকল্প গ্রহণ (Choosing proper alternative): মূল্যায়নকৃত বিকল্প হতে প্রতিষ্ঠানের বাস্তবতা বিবেচনায় উত্তম বিকল্প বাছাইয়ের কাজকেই উত্তম বিকল্প গ্রহণ বলে । এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপককে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে বিকল্পগুলোকে দেখতে হয়। মূল্যায়নে কোনো বিকল্প উত্তম মনে হলেও সামগ্রিক বিচারে তা প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভজনক নাও হতে পারে। সাময়িকভাবে কোনো বিকল্প গ্রহণ লাভজনক মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে । বাংলাদেশে বিদ্যুত সমস্যা নিরসনে কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে বিদ্যুত উৎপাদন, গ্যাস ও কয়লা থেকে বিদ্যুত উৎপাদন এবং পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পে বিদ্যুত উৎপাদনের বিভিন্ন বিকল্প রয়েছে। সরকার কুইক রেন্টাল পদ্ধতিকে সাময়িকভাবে উৎসাহিত করলেও সেই সাথে স্থায়ী বিদ্যুত প্লান্ট স্থাপনের বিষয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে । কারণ সাময়িক ব্যবস্থা দেশের জন্য মারাত্মক সংকট ডেকে আনতে পারে । এরূপ বিকল্প গ্রহণের পর সিদ্ধান্ত আকারে তা অধস্তনদের জানানো ও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়ে থাকে ।

Content added By

সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তাকারী উপাদান

সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটা যৌক্তিক প্রক্রিয়া । যেক্ষেত্রে একজন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সমস্যা চিহ্নিতকরণ বা করণীয় কোনো বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা অর্জনের পর সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধারাবাহিক কতকগুলো পদক্ষেপ অনুসরণ করেন । এরূপ পদক্ষেপ অনুসরণ করে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে কতকগুলি বিষয় তাকে সহায়তা প্রদান করে । নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:

১. বিচার ক্ষমতা ও প্রজ্ঞা (Judgment power and intuition): বিচার ক্ষমতা হলো কোনো পরিস্থিতি অনুধাবনপূর্বক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা এবং প্রজ্ঞা হলো ভবিষ্যৎকে বুঝতে পারার সামর্থ্য । বিভিন্ন বিকল্প থেকে উত্তম বিকল্প বাছাইয়ে সিদ্ধান্তগ্রহীতার বিচার ক্ষমতা ও প্রজ্ঞা তাকে বিশেষভাবে সহায়তা করে । সাধারণ বিচারে কোনো বিকল্প লাভজনক মনে হলেও প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি বিবেচনায় তা লাভজনক নাও হতে পারে । তাই সিদ্ধান্তগ্রহীতা কতটা বিচক্ষণতার সাথে ও দূরদৃষ্টি সহকারে উত্তম বিকল্প বাছাই করতে সক্ষম তা এক্ষেত্রে মুখ্য বিষয় ।

২. সুসংবদ্ধ চিন্তা (Systematic thought) : সুসংবদ্ধ চিন্তা বলতে একজন সিদ্ধান্তগ্রহীতা কতটা ঠাণ্ডা মাথায় নিয়ম মেনে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন তার সামর্থ্যকে বুঝায় । অনেকেই থাকেন যারা কোনো বিষয়কে গুছিয়ে চিন্তা করতে পারেন না। অনেকে বিষয় বুঝে উঠার আগেই মতামত দিয়ে ফেলেন । প্রতিষ্ঠানের নিয়ম- কানুনও অনেকে বুঝে উঠতে পারে না । সেক্ষেত্রে তাদের পক্ষে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত দেয়া অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না । তাই সুসংবদ্ধ চিন্তা সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যক্তিকে সহায়তা করে ।

৩. অভিজ্ঞতা ও নৈপুণ্য (Experience and skill): সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যক্তির অভিজ্ঞতা ও নৈপুণ্য একটা বড় সহায়ক উপাদান । অভিজ্ঞতা এমন এক শক্তি যা ব্যক্তির জ্ঞান, দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা, বিচার ক্ষমতা সবকিছুকেই সংহত ও শক্তিশালী করে। অভিজ্ঞ ব্যক্তি সাহসী হয় এবং পরিস্থিতি ও প্রয়োজন দ্রুত উপলব্ধি করতে পারে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যক্তিক নৈপুণ্য, দক্ষতা বা কুশলতা যথাসময়ে যথাসিদ্ধান্ত দিতে ও অন্যদের নিকট থেকে নিজ মতামতের পক্ষে সমর্থন আদায়ে ব্যক্তিকে সহযোগিতা করে ।

৪. তথ্য (Information): বর্তমান যুগ হলো তথ্যের যুগ । যে যত বেশি তথ্য ধারণ করেন তার পক্ষে তত কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়। অনুমাননির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাল এখন আর নেই । একজন শিল্পমালিক উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তা বিবেচনা করেন। প্রতিযোগীরা কি ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, গ্রাহকদের রুচি-পছন্দ কোন দিকে যাচ্ছে, উৎপাদন বাড়ালে তা বিক্রয়ে বিক্রয় বিভাগ কতটা সমর্থ, মধ্যস্থ ব্যবসায়ীরা কেমন সাড়া দেবে- এ সকল বিষয়ে তথ্য থাকলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়ে থাকে ।

৫. ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব (Power and authority): ক্ষমতা হলো অন্যদের প্রভাবিত করার সামর্থ্য । অন্যদিকে কর্তৃত্ব হলো অন্যদের বাধ্য করার ক্ষমতা । একজন ব্যবস্থাপক যদি অন্যদেরকে প্রভাবিত করার সামর্থ্য রাখেন তবে তার পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয় । সাংগঠনিক নিয়মে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই অধস্তনদের ওপর কর্তৃত্বের অধিকারী থাকেন। ফলে তার দেয়া সিদ্ধান্ত মানতে অধস্তনরা বাধ্য থাকে। তদুপরি যদি তিনি অধস্তনদের প্রভাবিত করার সামর্থ্য রাখেন তবে তার এই ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব তার সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা রাখে ।

৬. প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য (Capacity of organization) : অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন সহযোগী উপায়- উপকরণসমূহের কার্যকর উপস্থিতির মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানের যে সক্ষমতার সৃষ্টি হয় তাকে প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য বলে । যোগ্য জনশক্তি, আনুগত্য ও শৃঙ্খলা, উত্তম কার্য পরিবেশ, আর্থিক ও কারিগরি সামর্থ্য, বাজার সামর্থ্য, ব্যবস্থাপনা সামর্থ্য, প্রতিষ্ঠানের সুনাম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কাম্য মাত্রায় বজায় থাকলে নির্বাহীদের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন সহজ হয় । অন্যথায় সিদ্ধান্ত দিতে ব্যবস্থাপকদের নানান বিষয় ভাবতে হয় । ফলে সিদ্ধান্তহীনতার প্রতি এক ধরনের ঝোঁকের সৃষ্টি হয়ে থাকে ।

৭. অংশগ্রহণের সুযোগ (Opportunity of participation): সিদ্ধান্ত গ্রহণে অধস্তনদের অংশগ্রহণের সুযোগ সিদ্ধান্তের মানকে উন্নত করে । সেই সাথে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণেও সহায়তা দেয় । একটা প্রতিষ্ঠানে যদি গণতান্ত্রিক বা অংশীদারিত্বমূলক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গড়ে তোলা যায় তবে অধস্তনদের মধ্যে উচ্চ মনোবল বিরাজ করে । ফলে তারা পরামর্শ প্রদানে যেমনি স্বতঃস্ফূর্ত থাকে তেমনি গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসে । তাই প্রতিষ্ঠানে অধস্তনদের কার্যকর অংশগ্রহণের সংস্কৃতি গড়ে তোলা গেলে তা সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সহায়তা দেয় ।

Content added By

সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়

সর্বক্ষেত্রেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সফলতা অর্জন সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর নির্ভরশীল । ব্যক্তিক সিদ্ধান্তে যদি ভুল হয় তাহলে ব্যক্তি ও তার পরিবার এর কুফল ভোগ করে । প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ যদি ভুল করেন তবে প্রতিষ্ঠানকে এ ভুলের মাশুল দিতে হয় । একজন ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় লাভজনক ব্যবসায়ের সন্ধান পেয়ে লেখাপড়া শেষ না করেই তাতে ঢুকে পড়লো । এক পর্যায়ে ব্যবসায় বন্ধ । অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিটাও নেয়া হলো না । জীবনটাই মাটি হওয়ার পালা । একটা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিগণ কাজ বাড়বে চিন্তা করে বেশি লোক নিয়োগ দিলেন । কাজ বাড়লো না কিন্তু বেশি লোক নিয়োগের কারণে ব্যয়সহ নানান জটিলতা প্রতিনিয়তই ভোগ করতে হচ্ছে । সমস্যা নিরসনের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে নতুন নতুন সমস্যা মোকাবেলার নজীর প্রায়শই লক্ষণীয় । শ্রমিকদের দু'টি দল গন্ডগোল করেছে । কর্তৃপক্ষ দু'দলের দু'জনকে চাকরি থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিলেন । পরে দেখা গেল সব শ্রমিক একত্রিত হয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে । তাই নানান বিষয় সতর্কতার সাথে বিবেচনা করেই প্রতিষ্ঠান সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় । এক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়সমূহ নিম্নরূপ:

১. সমস্যার প্রকৃতি (Nature of problem): যে সমস্যা সমাধানের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে তা সমস্যা হিসেবে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সমস্যার প্রকৃতি ও গভীরতা কেমন ইত্যাদি বিষয় বিশেষভাবে বিবেচনায় নিতে হয় । অনেক সময় প্রতিষ্ঠান ছোট বিষয়কে বড় করে দেখে সিদ্ধান্ত নেয় । কিন্তু পরে দেখা যায়, নতুন সিদ্ধান্ত না নিয়ে অন্যভাবে ম্যানেজ করা যেতো । অনেক সিদ্ধান্ত থাকে যেগুলো পৌনঃপুনিক প্রকৃতির; যেমন- কাঁচামাল ক্রয়, মজুত পণ্য বিক্রয়, কর্মী নিয়োগ ইত্যাদি । যেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ । কিন্তু কিছু সিদ্ধান্ত থাকে যেগুলির প্রভাব ও ফলাফল ব্যাপক হয়ে থাকে; যেমন- শ্রমিক অসন্তোষ, কারখানা পুড়ে যাওয়া, অন্য কোম্পানির সাথে একত্রীভূত হওয়া ইত্যাদি। এরূপ ক্ষেত্রে অনেক ভেবে-চিন্তে সমস্যা মোকাবেলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন। পড়ে ।

২. ভবিষ্যৎ অবস্থা (Future condition): সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে ভবিষ্যৎ অবস্থা কী দাঁড়াবে তাও বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হয় । কাঁচামালের দাম কমেছে বিবেচনায় একটা প্রতিষ্ঠান বেশি কাঁচামাল কিনে তা মজুদ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে । কিন্তু যদি দেখা যায়, বাজারে পণ্যের চাহিদা এ সময়ে কম থাকবে বিধায় বেশি পরিমাণে কাঁচামাল কিনলে তা অব্যবহৃত অবস্থায় গুদামে পড়ে থাকবে । এতে পুঁজি আটকে থাকার এবং কাঁচামাল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকির সৃষ্টি হবে। তা হলে কর্তৃপক্ষ এরূপ সিদ্ধান্ত নিতে বিরত থাকবে । ভবিষ্যৎ অবস্থা নিশ্চিত হলে একভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় কিন্তু যদি এরূপ অবস্থা ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার নির্দেশ করে তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অত্যন্ত সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন পড়ে ।

৩. প্রাপ্ত তথ্য (Received information) : সকল ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে কমবেশি তথ্য বিবেচনার প্রয়োজন পড়ে । ধারণা বা অনুমানের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিলে অনেক সময়ই তা ক্ষতির কারণ হয় । একজন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে কাঁচামাল সরবরাহ করেন। বাজার সম্পর্কে পর্যাপ্ত খোঁজ-খবর না নিয়ে তাকেই মাল সরবরাহের ফরমায়েশ দেয়া হচ্ছে। বাজারে কাঁচামালের মূল্য কমলেও সঠিক তথ্য প্রতিষ্ঠানের নিকট থাকায় পুরনো দামে মাল কেনার বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর । তথ্য পেলেও সেই তথ্য কতটা বিশ্বাসযোগ্য সেটাও দেখা দরকার । সবমিলিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীগণের নিকট সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় সকল বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকার ও তার বিবেচনার প্রয়োজন পড়ে ।

৪. সিদ্ধান্ত লক্ষ্য (Decision goal): অনেক সময় বিশেষ লক্ষ্য সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় । সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের লক্ষ্যকে যথার্থরূপে বুঝে নিয়ে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এগুনোর প্রয়োজন পড়ে । ধরা যাক, শ্রমিক-কর্মচারীদের নতুন বেতন স্কেল দেয়া হবে । এরূপ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে লক্ষ্য হতে পারে প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্যের মধ্যে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হবে এবং জনশক্তিও তাতে সন্তুষ্ট থাকবে । এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে শ্রমিক- কর্মচারীদের সাথে ঊর্ধ্বতন মত বিনিময় করতে পারেন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ কমিটিতে কর্মচারীদের প্রতিনিধি রাখতে পারেন । এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য থাকে যেভাবেই হোক নতুন বেতন কাঠামো যেনো সবার নিকট গ্রহণযোগ্য হয়। শ্রমিক-কর্মীদের অভিযোগ নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত নিতে যেন তা নতুন অভিযোগের সৃষ্টি না করে সে বিষয়টিও মনে রাখা আবশ্যক ।

৫. সহযোগিতার মাত্রা (Degree of co-operation): সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকারী পক্ষসমূহের সহযোগিতা কেমন পাওয়া যাবে সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা আবশ্যক । প্রতিষ্ঠানে অধস্তনরা যোগ্য ও আন্তরিক হলে উর্ধ্বতন যে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। কিন্তু শ্রম-ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক ভালো না হলে বা অধস্তনরা যোগ্য না হলে তাদের নিকট থেকে যথোপযুক্ত সহযোগিতা পাওয়া যায় না। প্রতিষ্ঠানে অংশীদারিত্বমূলক ব্যবস্থাপনা, শিল্পীয় গণতন্ত্র ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করা গেলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ও বাস্তবায়নে এরূপ সহযোগিতার মাত্রা বেশি হয় ।

৬. প্রাপ্তব্য সময় (Receivable time): সিদ্ধান্তের সাথে সময়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান । ভালো সিদ্ধান্ত নিলেই চলে না- যথাসময়ে ঐ সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন । সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মধ্যে একটা সময়ের পার্থক্য থাকে । যদি এমন সময়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, তা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি গ্রহণে প্রয়োজনীয় সময় পাওয়া যাচ্ছে না তাহলে ঐ সিদ্ধান্ত উত্তম সিদ্ধান্ত নয় । সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও তথ্য সংগ্রহ, আলোচনা, পরামর্শ ইত্যাদি কাজে সময়ের দরকার হয় । মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে সেখানেও সময়ের প্রয়োজন। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্যোগও যথাসময়ে নেয়া আবশ্যক ।

বর্তমানকালে বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সো'ট (SWOT) বিশ্লেষণকে গুরুত্ব দেয় । SWOT বিশ্লেষণ বলতে শক্তি (Strength), দুর্বলতা (Weakness), সুযোগ (Opportunity) ও ভীতি (Threat)- এ চারটা ও উপাদান বা বিষয়কে পাশাপাশি রেখে বিশ্লেষণ করাকে বুঝায়। যার প্রথম দু'টি অভ্যন্তরীণ উপাদান এবং পরের দু'টি বাহ্যিক উপাদান বিবেচনা করা হয়ে থাকে। শক্তি (Strength) এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সামর্থ্য, ব্যবস্থাপনার দক্ষতা, জনশক্তির উচ্চ মান ইত্যাদি বিষয় পড়ে । দুর্বলতা (Weakness ) এর মধ্যে মূলধনের অভাব, ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা, সুনামের অভাব ইত্যাদিকে বুঝায়। অন্যদিকে সুযোগ (Opportunity) বলতে বাজার সম্ভাবনা, প্রতিযোগীদের দুর্বল অবস্থা, অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশ ইত্যাদি বুঝানো হয় । ভীতি (Treat) এর মধ্যে ক্ষতিকর প্রতিযোগী পরিবেশ, অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা, শক্তি-সম্পদের অভাব ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত ।

Content added By

সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সমস্যা

ব্যবস্থাপনার একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। ব্যবস্থাপকীয় সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপকগণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কতকগুলো বাধার সম্মুখীন হন, সেগুলো যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে । এসব প্রতিবন্ধকতার বিষয়গুলোর অধিকাংশই সাংগঠনিক সীমাবদ্ধতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অক্ষমতা বা অযোগ্যতার সাথে সম্পর্কিত থাকে । নিম্নে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পথে সৃষ্ট প্রধান প্রধান প্রতিবন্ধকতা বা সীমাবদ্ধতাসমূহ উল্লেখ করা হলো:

১. অপূর্ণাঙ্গ বা অসম্পূর্ণ তথ্য (Imperfect or incomplete information) : অনেক সময়ই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য ব্যবস্থাপকগণ পান না এবং সম্পূর্ণ তথ্যাদি সংগ্রহ করতে হলে পর্যাপ্ত সময় ও অর্থ ব্যয়ের যে প্রয়োজন পড়ে তারও সুযোগ সর্বত্র থাকে না । ফলে অপূর্ণাঙ্গ বা অসম্পূর্ণ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে হয় । এতে সিদ্ধান্ত সঠিকতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে পারে না ।

২. সমস্যা ও বিকল্পসমূহের অসঠিক শনাক্তকরণ (Inaccurate identification of prablem or alternatives): অনেক ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপকগণ যথাযথভাবে সমস্যাকে চিহ্নিত করতে পারেন না কিংবা কার্যকর বিকল্পসমূহের সন্ধান পান না । সমস্যার লক্ষণকেই সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করায় প্রকৃত সমস্যা অনাবিষ্কৃত থাকে । তাই ভুল বা অসঠিক সমস্যার চিহ্নিতকরণ থেকে সঠিক সমাধান পাওয়া সম্ভব নয় । যে কারণে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যবস্থাপকদের সমস্যাকে যথাযথভাবে চিহ্নিত করা যেমনি গুরুত্বপূর্ণ তেমনি সতর্কতার সাথে বিকল্পসমূহ নির্ধারণ ও মূল্যায়ন প্রয়োজন ।

৩. পক্ষপাতমূলক ঝোঁক (Biasness): সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীগণ অনেক সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণে নিরপেক্ষ থাকতে পারেন না । তার বা তাদের মধ্যে পক্ষপাতমূলক ঝোঁক সৃষ্টি হলে স্বাভাবিকভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দেয়। শ্রমিকদের মধ্যকার গণ্ডগোল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন নিজেই যদি একটা পক্ষ নিয়ে ফেলেন তখন সিদ্ধান্ত যেমনি যথার্থ হয় না তেমনি বাস্তবায়নে আরেকটা পক্ষ ঐ সিদ্ধান্ত মানতে চায় না । তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণে এ ধরনের প্রবণতা পরিহার করা উচিত।

৪.সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনীহা (Timidity): অনেক নির্বাহী থাকেন যারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনিচ্ছুক থাকেন গতানুগতিক পদ্ধতিতে কাজটি চালিয়ে নেয়াটাকেই তারা প্রাধান্য দেন। নিজে সিদ্ধান্ত না দিয়ে অনেক সময় কোনো অধস্তনের ওপর সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব দেন। এক্ষেত্রে এরূপ অধস্তনের দেয়া সিদ্ধান্ত তার সহকর্মীগণ মানতে চায় না। অনেক সময় ঊর্ধ্বতন সিদ্ধান্ত দিলেও যতটা আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ আবশ্যক তার ঘাটতি থাকে । ফলে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয় । ফলে কর্তৃপক্ষ যথাযথ থেকেই সিদ্ধান্ত আসা উচিত । 

৫. আবেগের প্রভাব (Effect of emotion): আবেগের সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিপরীতমুখী সম্পর্ক লক্ষণীয় আবেগ যত প্রবল হয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ততই কার্যকারিতা হারায়। সমস্যা চিহ্নিতকরণ, তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, বিকল্প উদ্ভাবন, মূল্যায়ন ও উত্তম বিকল্প গ্রহণ আর সেক্ষেত্রে মূল্যবান বিবেচিত হয় না। ব্যক্তি আবেগনির্ভর হয়ে পড়লে যত না ক্ষতি হয় তার চেয়ে একটা দল যখন আবেগতাড়িত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় তখন গৃহীত সিদ্ধান্তের মান নিঃসন্দেহে দুর্বল হয় এবং তার বাস্তবায়নে নানান জটিলতা দেখা দেয় । তাই আবেগমুক্ত থেকে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত ।

৬. উপকরণের অপ্রতুলতা (Inadequacy of input factors) : সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সম্পদ, মানবীয় সম্পদ ও ভৌত সম্পদের অভাবে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পর্যায়ে উপনীত হতে পারে না । প্রয়োজনীয় মূলধন, জনশক্তি ও অন্যান্য উপকরণের অপর্যাপ্ততাই অধিকাংশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ার প্রধান কারণ । তাই যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা যেনো যথাযথভাবেই বাস্তবায়ন করা যায় এবং উপকরণের অপ্রতুলতার অভাবে যেনো তা অবাস্তবায়িত না থাকে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সতর্ক থাকা উচিত ।

৭. সহযোগিতার অভাব (Lack of co-operation) : সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অনেক ক্ষেত্রেই অধস্তনরা ঊর্ধ্বতনদের সহযোগিতা করে না । অনেক ক্ষেত্রেই পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা ইত্যাদির অভাবেই সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত হয় না। তাই অধস্তনদের সহযোগিতার অভাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রায়ই অসম্ভব হয়ে পড়ে। সেজন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে যতটা সম্ভব অধস্তনদের পরামর্শ গ্রহণ বা সম্পৃক্ত করা গেলে এরূপ সহযোগিতা লাভ সহজ হয় ।

Content added By

সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের উপায়

যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার সঠিক বাস্তবায়ন যে কোনো প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানে যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় না বা নেয়া যায় না। আবার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও যথাসময়ে ও যথনিয়মে তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় পরবর্তীতে ঐ সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা থাকে না । ক্ষেত্রবিশেষে তা বাস্তবায়নকালে নতুন নতুন বিপত্তি দেখা দেয় । তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নকালে যে সকল সমস্যা দেখা দিতে পারে- তা কিভাবে সমাধা করা যায় সে সম্পর্কে সিদ্ধান্তগ্রহণকারী পক্ষের পূর্বধারণা থাকা আবশ্যক । নিম্নে এরূপ সমস্যা সমাধানের সম্ভাব্য উপায়সমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ (Collecting necessary informations): সিদ্ধান্ত গ্রহণের যথার্থতা উপযুক্ত তথ্য সংগ্রহের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিষ্ঠানের ভিতর ও বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা গেলে তার ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ যেমনি সহজ হয় তেমনি বাস্তবায়নকালে যে সকল সমস্যা দেখা দিতে পারে তাও আগাম অনুধাবন করা যায় । ফলে সমস্যাগুলো সমাধানে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করা সম্ভব হয় ।

২. সঠিক বিকল্প নির্বাচন (Selecting proper alternatives): সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সঠিক বিকল্পই সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচ্য। তাই কার্যকর বিকল্পগুলো যদি সঠিকভাবে দাঁড় করানো যায় এবং বাস্তবতা বিবেচনায় সেগুলো যথার্থভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব হয় তবে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়ে থাকে । এভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া গেলে তার বাস্তবায়নও সহজ হয় । তাই কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে সঠিক বিকল্প নির্বাচন করা উচিত ।

৩. যথাসময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Taking decision in time): সিদ্ধান্তের কার্যকর বাস্তবায়ন যথাসময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর নির্ভরশীল । সময় পরিবর্তনের সাথে অবস্থা বদলায় । যে পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার ছিল বিলম্ব হলে সেই পরিস্থিতি নাও থাকতে পারে। ফলে সিদ্ধান্ত অকার্যকর হয়ে পড়ে। ধরা যাক, প্রতিষ্ঠানের একটা মেশিনে কিছুটা ত্রুটি পরিলক্ষিত হচ্ছে। দ্রুত মেরামত প্রয়োজন । সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হওয়ায় মেরামতে যেয়ে দেখা গেল মেশিনটি আর মেরামতের অবস্থায় নেই, বদলাতে হবে ।

৪. প্রয়োজনে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ গ্রহণ (Consulting with concerned persons if necessary): যথার্থ সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা উত্তম ফল দেয় । সিদ্ধান্ত যদি কোনো পক্ষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হয় তবে তাদের সাথে আলোচনা করলে ক্ষেত্রবিশেষে অনেক ভালো ফল পাওয়া সম্ভব । সিদ্ধান্ত যারা বাস্তবায়ন করবে তাদের সাথে পরামর্শ করলে তাতে যেমনি সিদ্ধান্তের মান বাড়ে সেই সাথে বাস্তবায়নে তাদের কার্যকর সহযোগিতা লাভও সম্ভব হয়ে থাকে ।

৫. যথাসময়ে সিদ্ধান্ত অবহিতকরণ (Informing decision in time): যথাসময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেই চলে না যারা ঐ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে তাদেরকে যথাসময়ে ও যথানিয়মে সিদ্ধান্ত অবহিত করাও আবশ্যক । অনেক সময় দেখা যায় তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা নিচের পর্যায়ে ঠিক সময় পৌছুলো কি না সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেয় না । অনেক সময় সিদ্ধান্ত যে প্রক্রিয়ায় জানালে উত্তম ফললাভ সম্ভব তা না করে শুধুমাত্র একটা সার্কুলার দিয়েই দায়িত্ব শেষ করা হয় । ফলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয় ।

৬. প্রয়োজনীয় সহায়তা দান (Providing necessary assistance): সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকালে বাস্তবায়নকারী পক্ষের বিভিন্ন উপকরণগত সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে । তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাথে প্রয়োজনীয় উপকরণগত সহায়তা কখন, কতটা লাগবে এবং তা কিভাবে নিশ্চিত করা যাবে তাও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী পক্ষকে ভাবতে হয় এবং সে অনুযায়ী তা সরবরাহের প্রয়োজন পড়ে । বাস্তবায়নকালে সংশ্লিষ্টদের যদি প্রয়োজনীয় জনবল, যন্ত্রপাতি, অর্থ, মালামাল ইত্যাদির জন্য ঊর্ধ্বতনের মুখ চেয়ে বসে থাকতে হয় তবে নিশ্চিতভাবেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না ।

৭. কার্যকর তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ (Effective supervision and control): সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাইলে কার্যকর তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ । সিদ্ধান্ত জানানোর পর উর্ধ্বতন যদি তার বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ে খোঁজ-খবর না নেয়, বাস্তবায়নকালে কোনো ভুল হচ্ছে কি না তা না দেখে- তবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টদের প্রচেষ্টায় ঘাটতি লক্ষ করা যায়। যে সকল ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ সেখানে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়কাল নির্ধারণপূর্বক প্রতিটা পর্যায় শেষে প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করা উচিত। 

Content added By

Promotion

Promotion